ঢাকা , বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫ , ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (গাউক) আজ আর কোনো সেবামূলক সংস্থা নয়

গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (গাউক)কের ভয়াল থাবা: গাজীপুরের শ্বাসরুদ্ধকর অস্তিত্বের সংকট!

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ২৭-১০-২০২৫ ১১:২৩:৫৬ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ২৭-১০-২০২৫ ১১:২৩:৫৬ অপরাহ্ন
গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (গাউক)কের ভয়াল থাবা: গাজীপুরের শ্বাসরুদ্ধকর অস্তিত্বের সংকট! গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (গাউক) আজ আর কোনো সেবামূলক সংস্থা নয়; এটি লাগামহীন দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা এবং পরিবেশ-হত্যার এক সুসংগঠিত চক্রে পরিণত হয়েছে। একাধিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এই সংস্থার অপশাসনের যে ভয়াল চিত্র উন্মোচিত হয়েছে,

গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (গাউক) আজ আর কোনো সেবামূলক সংস্থা নয়; এটি লাগামহীন দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা এবং পরিবেশ-হত্যার এক সুসংগঠিত চক্রে পরিণত হয়েছে। একাধিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এই সংস্থার অপশাসনের যে ভয়াল চিত্র উন্মোচিত হয়েছে, তাতে স্পষ্ট যে গাউক পরিকল্পিত নগরী গড়ার পরিবর্তে জনস্বার্থ বিরোধী এক বিষবৃক্ষ রোপণ করেছে। কর্মকর্তাদের সীমাহীন অর্থলোভ ও জবাবদিহিতার চরম অভাবে গাজীপুরের অস্তিত্ব আজ এক ভয়াবহ মানবিক ও পরিবেশগত বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে।

গাউকের কর্মকর্তারা অর্থের বিনিময়ে যে কেবল আইন ভাঙছেন তা নয়, তারা সুপরিকল্পিতভাবে গাজীপুরের প্রাকৃতিক জীবনরেখাগুলোকে খুন করছেন।

দক্ষিণ পানিসাইল মৌজায় শতবর্ষী ও দৃশ্যমান শফিউল্লাহ খালকে জলাশয় হিসেবে গণ্য না করে সেখানে বহু তল ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই খালটি পাঁচটি গ্রামের জল নিষ্কাশনের একমাত্র অবলম্বন। জনগণের জীবন ও পরিবেশকে উপেক্ষা করে কর্মকর্তারা ব্যক্তিগত পকেট ভারীর এক জঘন্য খেলায় মেতেছেন।

উন্মুক্ত জলাশয় পাইপ ফেলে ভরাট করা হচ্ছে, এমনকি সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা পরিদর্শন করেও এই পরিবেশ-অপরাধের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। এই রহস্যময় নীরবতা প্রমাণ করে, গাউকের এই পরিবেশ-হত্যার ষড়যন্ত্রে অন্যান্য সংস্থাও নীরব সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।

গাউকের অভ্যন্তরে ঘুষ লেনদেন এখন 'ফাইল আটকে রাখা'র মাধ্যমে পরিচালিত এক সুসংগঠিত শিল্পে পরিণত হয়েছে। প্রতিটি ছাড়পত্রে তিন থেকে চার মাস সময় লাগে শুধু  নির্দিষ্ট লেনদেন না হওয়ার কারণে।
কোনো নাগরিক বৈধ কাজ করতে চাইলে তাকে নানাভাবে হয়রানি করা হয়। ফাইল ইচ্ছাকৃতভাবে বছরের পর বছর আটকে রাখা হয়—এই কৌশলটি এতটাই সুসংগঠিত যে, এটি এখন সাধারণ মানুষকে ঘুষ দিতে বাধ্য করার একটি পরিকল্পিত ব্যবস্থা। জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ এই দুর্নীতিবাজদের পকেটে জমা হচ্ছে।


 কর্মকর্তারা ত্রুটিপূর্ণ জমিতে 'বিশেষ প্রকল্প' দেখিয়ে আইরিশ ফ্যাশন লিমিটেডের মতো প্রতিষ্ঠানের অনুমোদনহীন ভবনগুলোকে ছাড়পত্র দিয়েছেন। গাউক প্রমাণ করছে, অর্থের বিনিময়ে তারা যেকোনো অন্যায়কে বৈধতার সনদ দিতে প্রস্তুত।


গাউকের দুর্নীতি কেবল আর্থিক ক্ষতিতেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি গাজীপুরের পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যকে এক চরম সংকটের মুখে ঠেলে দিয়েছে।

অপরিকল্পিত ও অবৈধ শিল্প-কারখানাগুলো থেকে নির্গত বিষাক্ত রাসায়নিক বর্জ্য সরাসরি নদী-নালা ও খাল-বিলে মিশে যাচ্ছে। এই বর্জ্য শহরের জল ও বাতাসকে বিষাক্ত করে তুলছে, যা নীরব ঘাতকের মতো সাধারণ মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে।

শহরজুড়ে গড়ে ওঠা অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো প্রমাণ করে, আইনের কঠোর বিধান গাউকের কর্মকর্তাদের কাছে নিছক উপহাস। তারা নিয়মিত মাসোহারা নিয়ে এই নির্মাণকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন।

এই অপরিকল্পিত বহুতল ভবনগুলোতে জরুরি নির্গমন পথ বা সুরক্ষা ব্যবস্থা নেই। অগ্নিকাণ্ড বা ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগে এই ভবনগুলো শত শত মানুষের জন্য মৃত্যুফাঁদ হয়ে উঠবে। কর্মকর্তাদের নির্বিকার মনোভাব প্রমাণ করে, তাদের কাছে মানুষের জীবনের চেয়ে অবৈধ অর্থ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।


গাউকের এই সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়মের মূল কারণ হলো জবাবদিহিতার চরম অভাব। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বা সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কোনো সংস্থার কঠোর তদারকি না থাকায় এই কর্মকর্তারা নিজেদেরকে দেশের আইনের ঊর্ধ্বে মনে করছেন।

এই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির দ্রুত ও কঠোর অবসান ঘটাতে হবে। গাজীপুরের অস্তিত্ব এবং জনজীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে শেলোচনা নয়, কঠোরতম অ্যাকশন অপরিহার্য।

নিউজটি আপডেট করেছেন : News Upload

কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ