ঢাকা , বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫ , ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শামীম আখতার শেষ দিনেও দুর্নীতিকে বিদায় জানাতে পারেননি

স্বৈরাচার সরকারের সময় ছিলেন ক্ষমতাসীনদের বিশ্বস্ত দোসর

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ০৩-১১-২০২৫ ০৬:৫৮:৩৩ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ০৩-১১-২০২৫ ০৬:৫৮:৩৩ অপরাহ্ন
স্বৈরাচার সরকারের সময় ছিলেন ক্ষমতাসীনদের বিশ্বস্ত দোসর সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মোঃ শামীম আখতার
নিজস্ব প্রতিবেদক : 

গণপূর্ত ইএম অংশের তিনজন প্রকৌশলী মোঃ জিয়াউর রহমান, মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, জনাব তাসফিন মুহাইমীন হক কে অবৈধ ও বিধিবহির্ভুত ভাবে পদোন্নতির প্রস্তাব পাঠিয়েছেন সাবেক প্রধান প্রকৌশলী স্বৈরাচারের দোসর মোঃ শামীম আখতার |
গণপূর্ত অধিদপ্তরের এই সদ্য সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মোঃ শামীম আখতার, যিনি বিগত স্বৈরাচার সরকারের সময় ছিলেন ক্ষমতাসীনদের বিশ্বস্ত দোসর, দায়িত্ব হস্তান্তরের মাত্র এক ঘণ্টা আগে আবারও আলোচনায়।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, ২৮ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে দায়িত্ব হস্তান্তরের মাত্র এক ঘন্টা আগে তিনি ১ কোটি টাকার ঘুষে ভেজা কলমে ২৫.৩৬.০০০০. ২১৫.১২.১০৭.১৮–১৩৫৭ নং স্মারকের একটি পত্র স্বাক্ষর করেন যেটি ছিলো এক অবৈধ পদোন্নতির প্রস্তাবে এবং চাঞ্চল্যকর বিষয় হলো চিঠিটি তিনি স্বাক্ষর করেছেন ২৬অক্টোবর ২০২৫ তারিখের ব্যাকডেটে। এই চিঠিটিই এখন গণপূর্ত অধিদপ্তরে নতুন করে আলোচনার ঝড় তুলেছে।


বিচারাধীন মামলার তোয়াক্কা নয়, আদালতের আদেশের প্রতি প্রকাশ্য অবজ্ঞা  !  সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে (Civil Petition for Leave to Appeal No. 4340 of 2024) একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা বিচারাধীন— যেখানে গণপূর্ত ইএম উইংয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.জিয়াউর রহমান, মো. জাহাঙ্গীর আলম, তাসফিন মুহাইমিন হক সহ কয়েকজন দাবিকরেছেন তাদের সুপারিনটেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার (ই/এম) পদে পদোন্নতিতে অগ্রাধিকার দেওয়ার। মাননীয় আপিল বিভাগ মামলাটি শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন এবং নির্দেশ দেন যে, “এই আবেদনটি মূল মামলার শুনানির সময় একত্রে বিবেচনা করা হউক।” অর্থাৎ, status quo বজায় রাখার নির্দেশনা তখন কার্যত বহাল ছিল। কিন্তু শামীম আখতার সেই আদালতের মর্যাদাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে, ২৬ অক্টোবরের ব্যাকডেট ব্যবহার করে ২৮ অক্টোবর দায়িত্ব হস্তান্তরের মাত্র এক ঘণ্টা আগে এই পদোন্নতির প্রস্তাবটি প্রেরণ করেছেন।


ঘুষে ভেজা পদোন্নতি! এক কোটি টাকায় বিক্রি হল নীতি ও ন্যায় :  অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, এই অবৈধ প্রস্তাবের পেছনে প্রায় ১ কোটি টাকার ঘুষ লেনদেন হয়েছে। বিশেষ করে মো: জাহাঙ্গীর আলম নামের এক নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছ থেকে সদ্য সাবেক প্রধান প্রকৌশলীশামীম আখতার নগদ ১ কোটি টাকা গ্রহণ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘুষের বিনিময়ে তৈরি সেই ফাইলের ওপরই ব্যাকডেট (২৬ অক্টোবর) লিখে স্বাক্ষর করেছেন। তিনি প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্বভার হস্তান্তর করেছেন ২৮ অক্টোবর দুপুরে, দায়িত্ব হস্তান্তরের ঘণ্টাখানেক আগে প্রস্তাবটি মন্ত্রণালয়ে পাঠান। এই ফাইলই এখন গণপূর্তে ঘুরছে “ফ্যাসিবাদের শেষ দৌরাত্ম্য” নামে!

চাকরিবিধি লঙ্ঘনের উল্কাগতি উদাহরণ  :  চাকরিবিধির জ্যেষ্ঠতা বিধিমালা (বিধি ৮, উপবিধি ২) অনুসারে— “যে কর্মকর্তা সিনিয়র স্কেল বা বিভাগীয় পরীক্ষায় অকৃতকার্য, তিনিসর্বোচ্চ পঞ্চম গ্রেড (৪৩০০০–৬৯৫০০ টাকা) পর্যন্তই যোগ্য।” কিন্তু শামীম আখতার সেই আইনি সীমারেখা ভেঙে বিধিবহির্ভূতভাবেএই তিন কর্মকর্তাকে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (ই/এম) পদে চলতি দায়িত্ব প্রদানের প্রস্তাব দেন। এভাবেতিনি সরকারি চাকরিবিধি, প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ও আদালতের নির্দেশনা সবকিছুকেই পায়ের তলায় পিষেদেন এক কলমে।

স্বৈরাচারের উত্তরাধিকার ও ছাত্রলীগ সিন্ডিকেট  :  জানা যায় , গণপূর্ত ইএম উইংয়ে বিগত স্বৈরাচার সরকারের আমলে শেখ হেলাল এবং শেখ সেলিমের হস্তক্ষেপে এবং স্বয়ং শেখ হাসিনার মৌখিক আদেশে কোন প্রিলি কিংবা লিখিত পরীক্ষা ছাড়াই শুধুমাত্র ভাইভা পরীক্ষার মাধ্যমে উচ্চতর পদে নিয়োগ পান ছাত্রলীগের 11 প্রকৌশলী, তাও আবার উচ্চতর পদে ষষ্ঠ গ্রেডে | এ নিয়োগের বিরুদ্ধে বিসিএস প্রকৌশলীগণ উচ্চতর আদালতে মামলা করলে তাদেরকে প্রশাসনিক হয়রানি করা হয় |

এমনকি বিচারপতিদেরকে ফোন করে উচ্চতর পদে নিয়োগ দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন শেখ সেলিম | এক্ষেত্রে শেখ হাসিনার রেফারেন্স দেন শেখ সেলিম | অবশেষে দীর্ঘ শুনানি শেষে বিসিএসে নিয়োগপ্রাপ্ত বাদী কর্মকর্তাদের পদ সংরক্ষণ করে উচ্চতর পদে নিয়োগের রায় দেন আদালত | আদালতের সে রায়কেও বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে উচ্চতরপদে নিয়োগপ্রাপ্ত ছাত্রলীগের ১১ জনকে দেয়া হয় জেষ্ঠ্যতা | ফলে বিসিএস কর্মকর্তাদের মধ্যে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ মহীরুহ আকার ধারণ করে |

শেষ বিদায়ে দুর্নীতির প্রতীকী দলিল  :  ২৮ অক্টোবর ছিল তার প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে শেষ কর্মদিবস। সেদিন বিকেলেই দায়িত্ব হস্তান্তরের ঘণ্টাখানেক আগে, ব্যাকডেট ব্যবহার করে ঘুষে ভেজা পদোন্নতির ফাইল পাঠান তিনি। এ যেন নিজের বিদায়ের আগেই রেখে যাওয়া দুর্নীতির এক স্মারক দলিল,যা আদালত অবমাননারও জীবন্ত প্রমাণ।

জনমনে তীব্র প্রতিক্রিয়া  :  গণপূর্ত অধিদপ্তরের ভেতরে এখন একটাই প্রশ্ন ঘুরছে “একজন সাবেক প্রধান প্রকৌশলী কি আদালত বিচারাধীন অবস্থায় পদোন্নতির প্রস্তাব পাঠাতেপারেন?” অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “শামীম আখতার শেষ দিনেও দুর্নীতিকে বিদায় জানাতে পারেননি, বরংঘুষকেই নিজের ‘গিফট টু সার্ভিস’ বানিয়ে গেলেন।”

নিউজটি আপডেট করেছেন : News Upload

কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ