ঢাকা , বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫ , ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সুন্দরী নারী একমাত্র পুঁজিহাওয়ার ওপর ছুটি গ্রুপের হাউজিং ব্যবসা

​চাকচিক্য অফিস ও সুন্দরী নারী একমাত্র পুঁজিহাওয়ার ওপর ছুটি গ্রুপের হাউজিং ব্যবসা

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ০৪-১১-২০২৫ ০৩:১০:৪৬ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ০৪-১১-২০২৫ ০৩:১০:৪৬ অপরাহ্ন
​চাকচিক্য অফিস ও সুন্দরী নারী একমাত্র পুঁজিহাওয়ার ওপর ছুটি গ্রুপের হাউজিং ব্যবসা ছুটি গ্রুপের হাউজিং ব্যবসা
চাকচিক্য অফিস ও সুন্দরী নারী একমাত্র পুঁজিহাওয়ার ওপর ছুটি গ্রুপের হাউজিং ব্যবসা

না আছে প্লট বিক্রি করার মত পর্যাপ্ত জমি, না আছে ফ্ল্যাট বিক্রি করা মত স্থাপনা। অন্যের জমি ভাড়া নিয়ে সাইন বোর্ড টানিয়ে দেদারসে প্রতারণা করে যাচ্ছে। টার্গেট প্রবাসীরা ও দেশের কালো টাকার মালিকরা। প্রতারণার মাধ্যমে জনগণের অর্থ হাতিয়ে নিয়ে বিদেশে পাচার করছেন বলেও অভিযোগ আছে। পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাদের সাথে ছুটি গ্রুপের মালিক পক্ষের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র দাবি করছে। সূত্রমতে, চটকদার বিজ্ঞাপনের আড়ালে আবাসন ও রিসোর্ট প্রকল্পের নামে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে ছুটি গ্রুপ। শেয়ার বিক্রয় ও সাফ কবলা রেজিস্ট্রেশনের স্বপ্ন দেখিয়ে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে ছুটি গ্রুপের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে সুন্দরী নারীদের টোপ হিসেবে ব্যবহার করছে গ্রুপটি। অনেক ভুক্তভোগী অভিযোগ করেছেন, ছুটি গ্রুপের মেগা প্রজেক্ট পাঁচ তারকা মানের ‘ছুটি রিসোর্ট কক্সবাজার’-এর শেয়ারপ্রতি সাড়ে ৬ লাখ টাকা বিক্রি করছে এবং এক রুম বিক্রি করছে বহু বিনিয়োগকারীর কাছে। এতে লাভ তো দূরের কথা, বিনিয়োগের টাকা ফেরত পাওয়াও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। জানা গেছে, ২০২৭ সালের মধ্যে কক্সবাজারে ছুটি রিসোর্ট নির্মাণ শেষ করার কথা বলে সাড়ে ৩ হাজার শেয়ার মার্কেটে ছাড়ে ছুটি গ্রুপ। কিন্তু এখন পর্যন্ত ৩ শতাংশ কাজও শেষ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। অনেকে বিনিয়োগের টাকা ফেরত চাইলেও নানা প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছে ছুটি গ্রুপ। জানা গেছে, সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমসহ বেশকিছু মাধ্যমে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে গাজীপুরের পুবাইলে ‘ছুটি অরণ্যবাস’ নামে একটি পাঁচ তারকা হোটেল এবং কক্সবাজারে মেগা প্রজেক্ট ছুটি রিসোর্টের জন্য বিনিয়োগকারী খুঁজছে ছুটি গ্রুপ। এতে সাফ-কবলা দলিলমূলে শেয়ার মালিক হওয়ার সুযোগ এবং হস্তান্তরযোগ্য মালিকানা, ছুটির নিজস্ব রিসোর্টে ফ্রি অবকাশ যাপনের সুযোগ, ছুটি ক্লাব মেম্বারশিপ এ ৫০% থেকে ৭০% পর্যন্ত ডিসকাউন্ট, একবার বিনিয়োগে আজীবন হালাল মুনাফা লাভের সুবর্ণ সুযোগ, সামাজিক পদমর্যাদা বৃদ্ধি, জমিসহ আজীবন মালিকানা, উত্তরাধিকার সূত্রে হস্তান্তরের সুযোগসহ নানা প্রলোভন দেওয়া হলেও গ্রাহকের পকেটকাটা ছাড়া আর কিছুই বুঝে না ছুটি গ্রুপের লোকজন, বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, এভাবেই অভিনব কায়দায় গত ১৩টি বছর ধরে গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে ছুটি গ্রুপ। তাদের মূল টার্গেট থাকে প্রবাসী, কালো টাকার মালিক। এ ছাড়া মধ্যবিত্তদের আকর্ষণ করতে ১ থেকে ৫ লাখ টাকায় সাফ কবলারও ফাঁদ পাতা হয়। সূত্র জানায়, গ্রুপটির এমডি ইঞ্জিনিয়ার মিজানুর রহমানের রাজউক থেকে দুর্নীতির দায়ে চাকরি যায়। এরপর গ্রুপটির অপর দুই পরিচালক মোস্তফা কামাল ও মাসুদুর রহমান মাসুদের বিরুদ্ধে একাধিক নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ রয়েছ । এছাড়াও মাদক কারবারির সঙ্গেও জড়িত রয়েছে তারা বলে গোয়েন্দা সূত্রে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই তিন প্রতারকের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও বেশকিছু শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে বিতাড়িত কর্মী। এরা মিলে একটি প্রতারক সিন্ডিকেট তৈরি করেছে। এই সিন্ডিকেটটি বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাতের জন্য নিত্যনতুন প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করছে। দুর্নীতির টাকায় গত ২০১৩ সালে প্রথম গাজীপুরে ছুটি রিসোর্ট ও পূর্বাচলে ছুটি রিসোর্ট নির্মাণ করে লিজ নেওয়া জমিতে। পরবর্তীতে ওই নির্মিত প্রজেক্টের নাম ব্যবহার করে তারা উত্তরা-১০ নম্বর সেক্টর এবং বসুন্ধরা আবাসিকের জি ব্লকের ২৯ নম্বর রোডের ৮৪০ নম্বর প্লটে আবাসন প্রকল্পের নামে এফএনএফ প্রপার্টিজ নামে একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান তৈরি করে হাজারো মানুষের কষ্টের টাকা আত্মসাৎ করে তাদের নিঃস্ব করে দেয়। এখন নতুনভাবে ছুটি হারমোনি, ছুটি বে, ছুটি রিসোর্ট কক্সবাজার, সিলেটে সালতানাত টি রিসোর্টের কথা বলে চটকদার বিজ্ঞাপন ব্যবহার করে কোম্পানির সুন্দরী নারী কর্মীদের টোপ দিয়ে মার্কেট থেকে কয়েকশ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সাফ-কবলা রেজিস্ট্রেশনের স্বপ্ন দেখিয়ে তারা বিনিয়োগের প্রলোভন দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে এসব টাকা। প্রকৃত পক্ষে গত ৬-৭ বছরেও এসব প্রজেক্টে কাজ শুরু তো দূরের কথা, একটি ইটও ব্যবহার করা হয়নি। কোনো ক্রেতা এখন পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন বুঝে পায়নি। যদি কোনো ক্রেতা টাকা ফেরত চায় তাহলে তাকে দিনের পর দিন আজ না কাল দিবে বলে প্রতারণা করছে ছুটি গ্রুপ।
জানা গেছে, ছুটির পূর্বাচল, গাজীপুর ছাড়াও কুয়াকাটা এবং কক্সবাজারের মেরিনড্রাইভ সড়কে রয়েছে ছুটির প্রজেক্ট। কক্সবাজার টেকনাফের এলাকার মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাশে তৈরি হচ্ছে ছুটি রিসোর্ট কক্সবাজার। যেখানে ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে বিনিয়োগকারীরা পাবেন সাফকবলাসহ মালিকানা বুঝে নেয়ার সুযোগ। ছুটি রিসোর্ট কক্সবাজার সাড়ে ৩ হাজার শেয়ার মার্কেটে ছাড়ছে, যার প্রতিটি শেয়ারের মূল্য সাড়ে ৬ লাখ টাকা। বিনিময়ে বিনিয়োগকারীরা কী পাবেন এমন প্রশ্নের জবাবে ছুটি রিসোর্টের এক বিক্রয় প্রতিনিধি বলেন, আজীবন জমি ও রিসোর্টের মালিকানা। বিনিয়োগের ওপর বার্ষিক ১৫-২০% মুনাফা। (শেয়ার প্রতি বার্ষিক ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত)। সহজ কিস্তি বা এককালীন ক্রয়ের সুবিধা। সব ‘ছুটি রিসোর্ট’-এ আজীবন ৫০% ছাড়ে থাকার সুযোগ। ভবিষ্যতে শেয়ারের মূল্য কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে। সাফকবলা দলিলে রেজিস্ট্রেশন। এসব স্বপ্ন দেখিয়ে গ্রাহক আকৃষ্ট করলেও পরবর্তীতে লাভ তো দূরের কথা, মূল টাকা পেতেই হয়রানিতে হতে হয় গ্রাহকদের। ছুটি রিসোর্ট কক্সবাজারের কাজ ২০২৭ সালে শেষ করার কথা থাকলেও দেখা যায়, এখন পর্যন্ত ৩ শতাংশ কাজও শেষ করতে পারেনি। সংশ্লিষ্ট সূত্র দাবি করছে ছুটি গ্রুপের বিরুদ্ধে সরকার দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহন না করলে ডেসটিনি ও নিউওয়ের মত সাধারণ মানুষের টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যেতে পারে। যে কারনে এখনই ছুটি গ্রুপের লাগাম টেনে ধরার আহবান জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট মহল। তৃতীয় পর্বে থাকবে ছুটি গ্রুপের বিদেশে অর্থ পাচার

নিউজটি আপডেট করেছেন : News Upload

কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ