টেন্ডারে কারসাজি, ৩ কোটি টাকার রাজস্ব
টেন্ডারে কারসাজি, ৩ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ রাবার বাগানের
স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় :
০৫-১১-২০২৫ ০১:৩১:২০ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
০৫-১১-২০২৫ ০১:৩১:২০ অপরাহ্ন
টেন্ডারে কারসাজি, ৩ কোটি টাকার
হবিগঞ্জের শাহজীবাজার রাবার বাগানে জীবনচক্র হারানো ১৬ হাজার ২৫০ রাবার গাছ বিক্রির টেন্ডারকে কেন্দ্র করে ব্যাপক অনিয়ম ও কারসাজির অভিযোগ উঠেছে। শুধু শাহজীবাজার নয়, সিলেট অঞ্চলের আরও তিনটি রাবার বাগান—ভাটারা, সাতগাঁও ও রুপাইনছড়া—মিলিয়ে প্রায় ৫০ হাজার গাছ বিক্রির দরপত্র প্রক্রিয়াতেও একই ধরনের অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএফআইডিসি) প্রায় ৩ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
সূত্র জানায়, গত ৩০ অক্টোবর হবিগঞ্জের শাহজীবাজার রাবার বাগানের ৮টি লটে উক্ত গাছ বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, টেন্ডার প্রক্রিয়ায় কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা সিলেট অঞ্চলের রাবার শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মুবিন তালুকদার ও তার ভাগিনা মহিবুর রহমান মামুনের পক্ষে কাজ করেছেন। অভিযোগকারীরা জানান, তারা বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের মতিঝিল প্রধান কার্যালয়ে টেন্ডার দাখিল করতে গেলে সরকারি ভবনের চতুর্থ তলায় তাদের বলপূর্বক আটকে রাখা হয় এবং টেন্ডার জমা দিতে বাধা দেওয়া হয়। ভুক্তভোগীরা দাবি করেছেন, এই ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজও রয়েছে।
শুধু তাই নয় এর আগের রাত দফারফা (রিকোইজিশন) করার জন্য সকল ঠিকাদাররা একটি নির্দিষ্ট হোটেলে গোপন বৈঠক করেন। সেখানে সম্মত হননি মেসার্স তালুকদার কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী গিয়াস উদ্দিন তালুকদার। এসবের সকল প্রমাণ তার কাছে রয়েছে বলেও জানান। ক্ষতিগ্রস্ত আবেদনকারী মেসার্স তালুকদার কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী গিয়াস উদ্দিন তালুকদার বলেন, “অসৎ কর্মকর্তাদের মদদে আমাদের টেন্ডার জমা দিতে বাধা দেওয়া হয়েছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান এবং বন ও পরিবেশ উপদেষ্টার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।”
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, শুধুমাত্র শাহজীবাজার নয়, সিলেট অঞ্চলের অন্যান্য বাগানেও টেন্ডারে পূর্বের কস্ট এস্টিমেটের তুলনায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ কম দাম ধরা হয়েছে। রাবার বাগানে পূর্বের গাছের টেন্ডার হবিগঞ্জের মাধবপুরের মেসার্স তালুকদার কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী গিয়াস উদ্দিন তালুকদার পেয়েছিলেন। এবার প্রতি গাছে পূর্বের তুলনায় ৮০২ টাকা কম ধরা হয়েছে। এতে শুধু শাহজীবাজার বাগানেই প্রায় ৯৭ লাখ ৮২ হাজার টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ থেকে ৪ কোটি টাকা।
এছাড়াও অভিযোগ উঠেছে, বিএফআইডিসির সিলেট অঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক শোভন কান্তি সাহা ইচ্ছাকৃতভাবে এবারের টেন্ডার প্রক্রিয়া স্থানীয় পর্যায় থেকে সরিয়ে কেন্দ্রীয় অফিসে স্থানান্তর করেছেন, যার ফলে অনেক আবেদনকারী হয়রানির শিকার হন। যোগাযোগ করা হলে মহাব্যবস্থাপক সুভন কান্তি সাহা বলেন, “টেন্ডার প্রক্রিয়া কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালনা করা হয়েছে স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্য। কোনো দুর্নীতি বা অনিয়মের বিষয় আমাদের জানা নেই।” অন্যদিকে শ্রমিক নেতা মুবিন তালুকদার ও তার ভাগিনা মহিবুর রহমান মামুন অভিযোগের বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন।
অভিযোগকারী মো. গিয়াম উদ্দিন তালুকদার বলেন, “সন্ত্রাসীদের দিয়ে কিছু অসৎ কর্মকর্তা আমাদের টেন্ডার জমা দিতে বাধা দিয়েছেন।বন শিল্প অফিসের সিসিটিভি ফুটেজে এর প্রমাণ পাওয়া যাবে। আমি ন্যায়বিচারের আশায় চেয়ারম্যান ও উপদেষ্টার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।” বিএফআইডিসির রাবার টেন্ডার প্রকল্পের পরিচালক মাসুদুর রহমান ভূঁইয়া জানান, “চেয়ারম্যান স্যারের কাছে অভিযোগ এসেছে। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। অনিয়ম প্রমাণিত হলে টেন্ডার বাতিলসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” টেন্ডার কার্যক্রমের আরেক কর্মকর্তা বিবেক সরকার বলেন, “অভিযোগের সত্যতা পেলে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং রাজস্ব ফাঁকির বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।”
বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমরা ইতিমধ্যে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। প্রমাণ পেলে দ্রুতই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এদিকে এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্টদের দাবি, দ্রুত অবৈধ ওই টেন্ডারটি বাতিল করে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক প্রক্রিয়ায় নতুন করে টেন্ডার গ্রহণ করতে হবে।যে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে, তার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা।
নিউজটি আপডেট করেছেন : News Upload
কমেন্ট বক্স