ঋণ থেকে বাঁচতে অপহরণ নাটক,
অবশেষে ডিবির জালে ধরা ঋণ থেকে বাঁচতে অপহরণ নাটক,
আপলোড সময় :
০৫-১১-২০২৫ ০১:৩৯:৫৪ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
০৫-১১-২০২৫ ০১:৩৯:৫৪ অপরাহ্ন
ঋণ থেকে বাঁচতে অপহরণ নাটক,
ঋণ থেকে বাঁচতে অপহরণ নাটক, অবশেষে ডিবির জালে ধরা
জাহাঙ্গীর জুয়া খেলে হেরেছে প্রায় ৩/৪ লাখ টাকা, মানুষের ঋণ পরিশোধ করতে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে নিজের হাত-পা বেঁধে নিয়েছিল বন্ধু রাব্বিকে দিয়ে, নিজেই সাজিয়েছিল অপহরণ নাটক, অবশেষে পাবনা ডিবির জালে ধরা। ইচ্ছা ছিল ভাইদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেবে পাঁচ লাখ টাকা।
জাহাঙ্গীর হোসেন (৩৬) পাবনা সদর উপজেলার দাপুনিয়ার রিফাত মোল্লার ছেলে।
রবিবার (২ নভেম্বর) ঋণ থেকে বাঁচতে অপহরণ নাটক সাজায় জাহাঙ্গীর, অপহরণ ভেবে পাবনা সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে জাহাঙ্গীরের ছোট ভাই আলমগীর হোসেন। অপহরণ নাটকের লোমহর্ষক পরিকল্পনা বের হয়ে আসে পাবনা ডিবির প্রযুক্তিগত সহায়তায় সেই পরিকল্পনার কথাই পাবনা ডিবি পুলিশের এসআই অসিত কুমার দাসের ফেসবুক থেকে হুবহু তুলে ধরা হলো :
পুলিশকে জানালে মেরে ফেলব। ”স্যার আমি কি করব, আমি গরিব মানুষ আমাকে ১৫ হাজার টাকা দিতে চেয়েছে, আমি এইভাবে ছবি তুলে জাহাঙ্গীরকে দিয়েছি।” সহজ সরল স্বীকারোক্তি রাব্বির। ০২/১১/২৫ তারিখ রাত ১২টার পরে এক পরিচিত নাম্বার থেকে ক্রমাগত হোয়াটসঅ্যাপ থেকে বার বার কল আসছে বার বার আমি কেটে দিচ্ছি।
বিকেল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত আমি এসআই বেনুদাসহ ডিবির অফিসার ফোর্স সবাই প্রায় ক্লান্ত। আবার একই নম্বর থেকে একটি টাইপ করা অপহরণের অভিযোগ হোয়াটসঅ্যাপে এলো। কল ব্যাক করলাম। বললাম কি হয়েছে? ফোনের ওপার থেকে বললো, ”ভাই, আমার ভাই জাহাঙ্গীরকে অপহরণ করে চোখ- হাত পা-বেঁধে মেসেঞ্জারে তার ছবি দিয়ে পাঁচ লাখ টাকা চাচ্ছে ।
টাকা না দিলে মেরে ফেলবে।”
আমি বললাম, ”ওই ছবিগুলো আমাকে দাও আর থানায় অভিযোগ দাও”।
ওপাশ থেকে, ”থানায় অভিযোগ দিয়েছি, অভিযোগের কপি আপনার কাছে এনেছি আমরা ডিবি অফিসে।” আমি, ”তোমরা অফিসে বসো, আমরা আসছি” ডিবি অফিসে আসতে আসতে রাত প্রায় ১টা। থানায় দেওয়া অভিযোগের কপি আমি এবং এসআই বেনুদা পড়ে নিয়ে যা জানলাম, ভিকটিম টাকা তোলার পর থেকে মিসিং বিকেল ৫টা থেকে। তারপর রাত ১১টা থেকে ভিকটিমের পরিবারের মেসেঞ্জারে অপহরণের ছবি দিয়ে ৫ লাখ টাকা চাঁদা চাচ্ছে।
বাদীর পরিবারকে বললাম জাহাঙ্গীরের বন্ধু রাব্বীর কাছে গিয়েছিলেন? তারা জানায়, গিয়েছিল। রাব্বি বলেছে, তার সঙ্গে জাহাঙ্গীরের পাবনা শহরে দেখা হয়েছিল বিকেলে, তারপর জাহাঙ্গীরকে অটোযোগে নিজ বাড়ির দিকে যেতে দেখেছে। ভিকটিমের ব্যবহৃত সিম নম্বর বন্ধ। মাঝেমধ্যে ভিকটিমের ফেসবুক মেসেঞ্জার খুলছে আবার বন্ধ করছে।
ইতিমধ্যে আমাদের এডিশনাল এসপি রেজিনুর স্যার এবং আশিকের কাছ থেকে প্রযুক্তিগত হেল্প যা লাগে সব নিয়ে চললো চুল ছেড়া বিশ্লেষণ। অবশেষে এসআই বেনু দা বললো, স্যার চলেন আমরা অভিযানে বের হই। রাত বাজে দুটো বা আড়াইটা। ওসি ডিবি স্যার বললেন, আমি জেগে আছি তোমরা যাও, কোনো হেল্প লাগলে আমিও যাব। রাতেই আমরা পাবনার চর কোশাখালিতে ভিকটিম জাহাঙ্গীরের বন্ধু রাব্বির বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করি।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রাব্বি ঠিক একই কথা আমাদের জানায়, যা আগে বাদীর পরিবারকে জানিয়েছিল। তারপর আমি এবং বেনু দা কিছু প্রযুক্তিগত তথ্য প্রমাণসহ তাকে আরো নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করি। তখন রাব্বি সরলভাবে জানায় স্যার, আমি একটা সত্য কথা বলি, এটা কোনো অপহরণ না। জাহাঙ্গীর এক মাস থেকে এইরকম একটা পরিকল্পনা করছে যে, সে নিজেই অপহরণের নাটক সাজাবে এবং তার ভাইদের কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা নেবে। মানুষজন জাহাঙ্গীরের কাছে অনেক টাকা পাবে, প্রায় ৩/৪ লাখ টাকা। সে জুয়া খেলে হেরেছে। জাহাঙ্গীর আমাকে বলেছে যে, তার হাত-পা চোখ বাঁধা ছবি তুলে দিলে সে আমাকে ১৫ হাজার টাকা দেবে।
তাই সে আমার বাড়িতে এসেছিল। আমি জাহাঙ্গীর ফোন দিয়েই তার হাত-পা এবং চোখ বাঁধা অবস্থায় আমার ঘরের মেঝেতে পরে থাকা অবস্থায় ছবি তুলে দেই। সেই ছবি সে মেসেঞ্জারে দিয়ে সে নিজেই ৫ লাখ টাকা চাচ্ছে। “আমরা রাব্বির কাছ থেকে চোখ হাত-পা বাঁধার গামছা দড়ি উদ্ধার করে জিজ্ঞেস করলাম, জাহাঙ্গীর এখন কোথায় ”আমি জানি না স্যার তার ফোন বন্ধ, সে বলেছিল সে অনেক দূরে যাবে”। সকালে জাহাঙ্গীর ফোন খুললে তাকে ফোনে জানানো হলো তোমার অপহরণের স্ক্রিপ্টেড নাটক সমাপ্ত হয়েছে, রাব্বি সব স্বীকার করেছে। তুমি চলে আসো। সে কোনো প্রতিউত্তর না করে সূদূর কুমিল্লা থেকে পাবনায় চলে আসলে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, এসব সাজানো নাটকের উদ্দেশ্য কি? সে জানালো, ”অনেক টাকা ধার-দেনা হয়েছে স্যার তাই এসব করেছি, আমাকে ক্ষমা করে দেন। আমি আর ভবিষ্যতে এসব করব না।
মোরাল অব দ্যা স্টোরি, জুয়া খেলা আর্থিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যর জন্য হানিকর।
নিউজটি আপডেট করেছেন : News Upload
কমেন্ট বক্স