পাকশী ডিইও দপ্তরে দুর্নীতির অভিযোগ
রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি অফিস অনিয়মের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে
স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় :
০৮-১১-২০২৫ ১১:২০:০৫ পূর্বাহ্ন
আপডেট সময় :
০৮-১১-২০২৫ ১১:২০:০৫ পূর্বাহ্ন
রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি
বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের পাকশী ভূ-সম্পত্তি অফিস দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে উত্তাল। এই অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে জমি লিজ নেওয়া গ্রাহকদের কাছ থেকে অবৈধ অর্থ আদায়, জমি দখল এবং সরকারি রাজস্ব হ্রাসের মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। পাকশী ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা (ডিইও) আরিফুল ইসলাম, কানুন মনোয়ার হোসেন এবং অফিস সহকারী জাবের হোসেনের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগে এই দপ্তর যেন অনিয়মের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। নাটোর বড়গাছার বাসিন্দা আব্দুস সালামের অভিযোগ, কানুন মনোয়ারের সহযোগিতায় একই এলাকার ডিনার গ্রুপ তার বৈধ লিজের জমি দখল করে নিয়েছে। সালাম গত ১৯ জানুয়ারি রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। তিনি জানান, ২০২৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর তার বৈধ জমি ডিনার গ্রুপের লোকজন দখল করে নেয়। সালাম পাকশী ভূ-সম্পত্তি অফিসে বারবার আবেদন করেও জমি ফেরত পাননি। ২০২৩ সালে ডিইও সালামের জমি বুঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিলেও তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। গত ১১ ফেব্রুয়ারি সরেজমিনে নাটোর ও মাধনগর স্টেশন পরিদর্শন করে দেখা যায়, সেখানে রেলের জমিতে প্রায় ৩০০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। ব্যবসায়ীরা জানান, তারা কানুন মনোয়ারের কাছে খাজনা পরিশোধের পরও যথাযথ রশিদ পাননি। বিসমিল্লাহ হোটেলের মালিক ইউনুস জানান, তিনি খাজনা বাবদ ৩৩,৯০০ টাকা এবং অতিরিক্ত ১৫,০০০ টাকা রশিদ পাওয়ার জন্য মনোয়ারকে দিয়েছেন। সবজি আড়ত ব্যবসায়ী মুক্তার হোসেনও অভিযোগ করেন, প্রতি দোকান থেকে ৫,৬০০ টাকা খাজনা এবং অতিরিক্ত ৩,০০০ টাকা রশিদের জন্য দিতে হয়েছে। মাধনগর স্টেশন এলাকায় জলাশয় লিজ নিয়েও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। রেলওয়ের জ্বলকর নীতিমালা লঙ্ঘন করে টেন্ডার ছাড়াই দুই একর পাড়বিহীন জলাশয় লিজ দেওয়া হয়েছে। এই জলাশয়টি মাধনগর ডিগ্রী কলেজ সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত। নীতিমালা অনুযায়ী, জলাশয় লিজের জন্য সরেজমিন পরিদর্শন ও নিলামের মাধ্যমে সর্বোচ্চ দরদাতাকে লিজ দেওয়ার বিধান থাকলেও তা অনুসরণ করা হয়নি। বরং আক্কাস মৃধা, তার স্ত্রী এমএলএ এবং আসাদুল মেম্বারের নামে চার ভাগে তিন বছরের জন্য জলাশয় লিজ দেওয়া হয়েছে। এতে সরকার মোটা অঙ্কের রাজস্ব হারিয়েছে। মাধনগর স্টেশনের প্লট নং-৪২-এর লিজ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে জটিলতা চলছে। ১৯৮৪ সালে ইমাম জাফর সাদেককে এই প্লটের বাণিজ্যিক লাইসেন্স দেওয়া হয়। তিনি নিয়মিত খাজনা পরিশোধ করে আসছিলেন। কিন্তু ২০২১ সালে কানুন মনোয়ার মিথ্যা তথ্য দিয়ে এই প্লটটি মাফুলা বেগমের নামে লিজ দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। পরে আদালতের মাধ্যমে ইমাম জাফর তার জমি ফেরত পান। তবে তার করা আবেদনগুলো অফিস সহকারী জাবের হোসেনের কারসাজিতে গায়েব হয়ে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে। কানুন মনোয়ার এবং জাবের হোসেন এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। মনোয়ার দাবি করেন, তিনি নির্দোষ এবং পাকশী ডিইও সব বিষয়ে অবগত। তবে রেলওয়ের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা মনোয়ারকে ‘সান্তাহারের কানুন’ বলে উল্লেখ করে তার কার্যক্রম নিয়ে সতর্ক থাকেন। রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) আফজাল হোসেন জানান, অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রেল উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খানও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
নিউজটি আপডেট করেছেন : News Upload
কমেন্ট বক্স