ঢাকা , বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫ , ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

​আখের গোছানোর ধান্দায় বেপরোয়া খাদ্য উপদেষ্টা

ধান ক্রয়ের নামে নজিরবিহীন তুঘলকি কাণ্ড, সরকারের অর্থ লুটের মহোৎসব

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ০৮-১১-২০২৫ ১২:১১:৫৮ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ০৮-১১-২০২৫ ১২:১১:৫৮ অপরাহ্ন
ধান ক্রয়ের নামে নজিরবিহীন তুঘলকি কাণ্ড, সরকারের অর্থ লুটের মহোৎসব সরকারের অর্থ লুটের মহোৎসব
চলতি বোরো ধান সংগ্রহ নিয়ে একের পর এক তুঘলকি কাণ্ড ঘটে চলেছে, যার নজির অতীতে নেই। অনেকটা হঠাৎ করেই ‘যে যার মতো করে’ ধান ক্রয়ের কার্যক্রম চালানোর মৌখিক নির্দেশ দেন উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার। এর পরেই আবার ৩০ জুন হঠাৎ ধান ক্রয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়, তাও অলিখিতভাবে। এতে ক্রয় কেন্দ্রের কর্মকর্তারা এবং কৃষক উভয়েই পড়েছেন বিপাকে। কৃষক ক্রয় কেন্দ্রে এসে ধান বিক্রি করতে পারছেন না। অন্যদিকে কেন ধান ক্রয় করা হচ্ছে না, এর ব্যাখ্যাও ক্রয় কর্মকর্তারা কৃষককে দিতে পারছেন না। সরকারের নিয়ম অনুযায়ী বোরো মৌসুমে ধান ক্রয় কার্যক্রম চলার কথা আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। দু’মাস বাকি থাকতেই কেন ধান ক্রয় কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হলো, তাও মৌখিকভাবে- এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবুল হাছানাত হুমায়ুন কবীরের কাছে হোয়াটস অ্যাপ ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে। কিন্তু তিনি কোনো জবাব দিতে পারেননি। 
নজিরবিহীন এসব তুঘলকী কাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে ভয়াবহ তথ্য। ধান ক্রয় বাস্তবে কিছুই হয়নি। ধান ক্রয়ের নামে সরকারি অর্থ লুটপাটের মহোৎসব হয়ে গেছে গত জুন মাসে। খাদ্য কর্মকর্তারা ‘যে যার মতো করে’ ধান ক্রয় করার স্বাধীনতা পাওয়ার পর ধান না কিনেই তড়িঘড়ি এ সংক্রান্ত কাগজপত্র তৈরি করেছেন শুধুমাত্র। আর বিল পরিশোধের ভুয়া হিসাব দেখিয়েছেন নিজেদের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে, যে অর্থের একটি অংশ কমিশন হিসেবে খাদ্য কর্মকর্তাদের পকেটেই আবার ঢুকেছে। আরসি ফুড এবং ডিজি-এডিজির হাত ঘুরে এই কমিশনেরই একটি বড় অংশ ঢুকেছে উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদারের পকেটে।   
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সরকারের আয়ু ঘনিয়ে আসতে থাকায় আখের গোছানোর ধান্দায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার। বড় অংকের কমিশনের লোভে ঈদের আগ মুহূর্তে উপদেষ্টা নিজের অধীন খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তরের ধান ক্রয়ের বিষয়ে এমন কিছু বিতর্কিত এবং অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছেন যার নজির অতীতে নেই। মাঠ পর্যায়ের খাদ্য কর্মকর্তাদেরকে ধান ক্রয়ে অবাধ স্বাধীনতা দেয়া হয়। যারফলে ধান ক্রয় বাবদ সরকারের বিপুল অংকের টাকা ব্যয় হলেও বাস্তবে ধান ক্রয় হয়নি। ধান ক্রয়ের নামে সরকারি অর্থের মহোৎসব চলে এই সময়ে। তড়িঘড়ি শুধুমাত্র ক্রয় সংক্রান্ত কাগজপত্র তৈরি করেন খাদ্য কর্মকর্তারা এবং এর বিপরীতে বিল পরিশোধ দেখান। এতে ৫ মাসের ধান ক্রয়ের টার্গেট অতিক্রম করে মাত্র ২৫ দিনে। 
খাদ্য অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের সূত্রগুলো বলছে, ‘যে যার মতো করে’ ধান ক্রয়ের অবাধ স্বাধীনতা পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট খাদ্য কর্মকর্তারা বড় অংকের অবৈধ অর্থ আয়ের লোভে ধান ক্রয় না করে বরং সিন্ডিকেটের মিল মালিকদের সঙ্গে চাল সরবরাহের সমঝোতা করেন। কাগজপত্রে দেখান তারা, ধান সংগ্রহ করা হয়েছে এবং তা ছাটাই করে চাল তৈরির জন্য রাইস মিলে দেয়া হয়েছে। এতে তাদের অনেক রকমের অবৈধ লাভ। ধান কিনলে গুদামে পরিবহনের মাধ্যমে এনে তোলা, মিলে নেয়া-আনা, ছাঁটাই বাবদ ব্যয়, ঘাটতিজনিত সিস্টেম লস প্রভৃতি টনপ্রতি একটি উল্লেখযোগ্য অংকের অর্থ ব্যয় ও ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হতো। সরাসরি চাল ক্রয়ের কারণে এই টাকাটা পুরোটাই সংশ্লিষ্ট খাদ্য কর্মকর্তার পকেটে ঢুকেছে।  
উল্লেখ্য, এই অন্তর্বর্তী সরকারের আমলের খাদ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের দুর্নীতির কিছু চিত্র ইতিপূর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। সুনির্দিষ্ট তথ্যে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার দুর্নীতি-লুটপাটে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট ও দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী সাধন-কামরুলের পথেই হাঁটছেন। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, আলী ইমাম মজুমদার দুর্নীতিতে সাধন-কামরুলের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছেন। ঈদের আগ মুহূর্তে তিনি ধান ক্রয়কে কেন্দ্র করে হঠাৎ বেপরোয়া হয়ে উঠেন শুধুমাত্র টাকা কামানোর জন্য। ধান ক্রয় বাবদ কমিশনের টাকা অগ্রিম কালেকশনের জন্য আঞ্চলিক খাদ্য কর্মকর্তাদের (আরসি ফুড) ওপর চাপ সৃষ্টি করেন। ময়মনসিংহের আরসি ফুড আবু নঈম মোহাম্মদ সফিউল আলমকে প্রত্যাহার করে খাদ্য অধিদপ্তরে শাস্তিমূলক পদায়ন দেয়া হয় উপদেষ্টার চাহিদা অনুসারে কমিশনের অর্থ দিতে না পারায়। মূলতঃ তারপর থেকেই আরসি ফুডরা বেপরোয়া হয়ে উঠেন ধান ক্রয়ের নামে সরকারি অর্থ লুটপাটে। মন্ত্রণালয় থেকে বলে দেয়া হয়, যে যেভাবে পারে এবং যতটা পারে ধান কিনুক। ধান ক্রয়ের স্বাধীনতা দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে খাদ্য অধিদপ্তর থেকে চিঠিও ইস্যু করা হয় গত ২৮ মে, যার নজির অতীতে নেই। উপদেষ্টার এমন নির্দেশ এবং খাদ্য অধিদপ্তরের ‘ক্রয় স্বাধীনতা’র চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ক্রয়ের কাগজপত্র তৈরির ‘ধুম’ পড়ে যায় সারাদেশের খাদ্য কর্মকর্তাদের মধ্যে। 
খাদ্য অধিদপ্তরের গত ২৮ মে’র ইস্যুকৃত চিঠিতে বলা হয়, “চলতি বোরো সংগ্রহ, ২০২৫ মৌসুমে যে সকল উপজেলায় ধানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে ঐ সকল উপজেলায় ধানের মূল লক্ষ্যমাত্রার ২৫% অতিরিক্ত বরাদ্দ নিম্নোক্ত শর্তে প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হলো:
১। সংশ্লিষ্ট উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক বরাবর ধানের অতিরিক্ত লক্ষ্যমাত্রা প্রদানের জন্য প্রস্তাব প্রেরণ করবেন।
২। সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক বিষয়টি যাচাই-বাছাইপূর্বক সংগ্রহ বিভাগ, খাদ্য অধিদপ্তরকে অবহিতপূর্বক সংশ্লিষ্ট উপজেলায় ধানের অতিরিক্ত বরাদ্দ প্রদান করবেন এবং আগ্রহী কৃষক বিবেচনায় পরবর্তীতেও একই পদ্ধতি অনুসরণপূর্বক ধানের অতিরিক্ত বরাদ্দ প্রদান করবেন।
৩। অতিরিক্ত বরাদ্দ প্রদান শেষে স্থিরকৃত লক্ষ্যমাত্রা খাদ্য অধিদপ্তরকে অবহিত করবেন।
এতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন রয়েছে।”
খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবুল হাছানাত হুমায়ুন কবীরের নথি অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে অধিদপ্তর থেকে চিঠিটি ইস্যু হয়। তবে এর আগে মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে এ ধরনের নির্দেশনার কোনো চিঠি অধিদপ্তর পায়নি। উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদারের মৌখিক নির্দেশেই ডিজি হুমায়ুন কবীর এ চিঠিটি ইস্যুর পদক্ষেপ নেন। ধানের উৎপাদন এবার ভালো হয়েছে। সরকারের নির্ধারিত দর কেজি প্রতি ৩৬ টাকা, অন্যদিকে বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা করে। অর্থাৎ ৬ টাকার ব্যবধান। সরাসরি কার্ডধারী কৃষকের কাছ থেকে ক্রয়ের ক্ষেত্রেও কেজি প্রতি ২ থেকে ৩ টাকা পর্যন্ত কমিশন আদায় করেছেন খাদ্য কর্মকর্তারা। এর অডিও রেকর্ডের প্রমাণ শীর্ষকাগজ প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে। জানা গেছে, এই নির্ধারিত কমিশনে সন্তুষ্ট নন খাদ্য উপদেষ্টা। তিনি আরসি ফুডদের মাধ্যমে অঘোষিতভাবে নির্দেশ দিয়েছেন আরো বড় অংকের কমিশন আদায়ের জন্য। এই লেনদেনের কাজগুলো করেছেন মহাপরিচালক মো. আবুল হাছানাত হুমায়ুন কবীর এবং অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. জামাল হোসেনসহ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের আওয়ামী কর্মকর্তাদের একটি সিন্ডিকেট।
গত ২৮ মে’র ওই চিঠিটি জারি করা হয় আরসি ফুডদের বরাবর। চিঠিতে বরাদ্দের অতিরিক্ত ধান ক্রয়ের বিষয়ে আরসি ফুডদের পুরো ক্ষমতা দেয়া হয়। আর মুখে বলে দেয়া হয়, ‘যে যেভাবে পার’ ধান ক্রয় দেখাও- বড় অংকের কমিশন দাও। ধান ক্রয়ের ব্যাপারে আরসি ফুডদের প্রতি এভাবে অবাধ স্বাধীনতা দেয়া বা চিঠি ইস্যুর নজির অতীতে নেই বলে জানিয়েছেন খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। চিঠিটি দেখে প্রথমে অবিশ^াস্য মনে হয়েছে খাদ্য কর্মকর্তাদের কাছে। উপদেষ্টার নির্দেশ অনুযায়ী ডিজির কাছে কমিশনের টাকা দিতে না পারায় ময়মনসিংহের আরসি ফুড আবু নঈম মোহাম্মদ সফিউল আলমকে প্রত্যাহার করা হয়। তারপর থেকেই মূলতঃ ধান ক্রয়ের নামে ভুয়া কাগজপত্র তৈরির তৎপরতা শুরু হয়। এরপরে ২৮ মে’র চিঠিটি ইস্যুর পর অত্যন্ত বেপরোয়াভাবে ভুয়া কাগজপত্র তৈরির প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েন মাঠ পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট খাদ্য কর্মকর্তারা। 
খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২৬ মে পর্যন্ত মৌসুমের বোরো ধান সংগ্রহের পরিমাণ ছিল ৬৫ হাজার ২শ’ ২৪ টন। এপ্রিলের শুরু থেকে বোরো সংগ্রহের নিয়ম থাকলেও সাধারণতঃ ধান সংগ্রহ হয়ে থাকে ২০ এপ্রিলের পর থেকে। সেই হিসেবে ২৬ মে প্রায় এক মাস সময়ে ৬৫ হাজার ২শ’ ২৪ টন ধান সংগ্রহ হয়েছে। কিন্তু এর পরের দিনগুলোতে একেবারেই অস্বাভাবিক হারে সংগ্রহের মাত্রা বাড়তে থাকে। ৩০ জুন পর্যন্ত কাগজপত্রে সংগ্রহের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৫৮ টন। এই সময়ের মধ্যেই মৌসুমের সাড়ে ৩ লাখ টনের টার্গেটকে অতিক্রম করে, যদিও ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সংগ্রহের আরো দুই মাস বাকি আছে। জুনে ১০ দিন বন্ধ ছিল ঈদের ছুটির কারণে। এই ১০ দিন বাদ দিলে ২৬ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ২৫ দিনে সংগ্রহ হয়েছে ৩ লাখ ১০ হাজার ৮শ’ ৩৪ টন, যা আগের এক মাসের ৪৭৬%। অর্থাৎ প্রায় ৫ গুণ। এ ধরনের ঘটনা শুধু নজিরবিহীনই নয়, অকল্পনীয়- বলছেন খাদ্য কর্মকর্তারা। 
এই প্রতিবেদনে ইতিপূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে কিনলেও কেজি প্রতি একটি নির্দিষ্ট হারে কমিশন পাওয়া যায়। কিন্তু তারপরও খাদ্য কর্মকর্তারা ধান কিনতে সাধারণত আগ্রহী হন না। কারণ, এতে অনেক রকমের ঝক্কি-ঝামেলা রয়েছে। কার্ডের তালিকা অনুযায়ী কৃষকের কাছ থেকে লটারির মাধ্যমে খুচরো পদ্ধতিতে ধান কেনা, ধান পরিবহন করে আনা. গুদামে তোলা এবং এরপরে আবার ছাঁটাইয়ের জন্য গুদাম থেকে নামিয়ে পরিবহনের মাধ্যমে চাল কলে পাঠানো- এসবকে বাড়তি ঝামেলা মনে করে থাকেন খাদ্য কর্মকর্তারা। ঘাটতির ঝামেলা তো রয়েছেই। তাছাড়া ধান কিনে গুদাম ভর্তি করা হলে চালের বরাদ্দ কম পাওয়া যাবে, এটাকেও সমস্যা হিসেবে দেখে থাকেন খাদ্য কর্মকর্তারা। তাই কখনো ধান কেনায় আগ্রহী হন না। বরং এর পরিবর্তে চাল কেনায় অতি আগ্রহী হন। তবে ধান না কিনে কাগজপত্রে ধান ক্রয়ের হিসাব দেখিয়ে ওই টাকায় চাল কল থেকে চাল সরবরাহ নেয়ার সুযোগ থাকলে এটাকে পুরোপুরিই কাজে লাগান খাদ্য কর্মকর্তারা। কারণ, এতে ধানের কোনো ঝক্কি-ঝামেলা নেই, অন্যদিকে অবৈধ লাভও বেশি হারে পাওয়া যায়। 
খাদ্য অধিদপ্তরে এটা সবারই জানা, কৃষককে সুবিধা দেয়ার লক্ষ্যে ধান কেনা বাবদ প্রতি বছর বড় অংকের অর্থ বরাদ্দ থাকলেও এবং এ বাবদ অর্থ ব্যয় হলেও বাস্তবে সেই টাকায় ধান কেনা হয় না খুব একটা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট খাদ্য কর্মকর্তারা ধান না কিনেই কাগজপত্রে ক্রয় দেখান, বাস্তবে সেই টাকায় চাল সংগ্রহের অলিখিত চুক্তি করেন মিল মালিকদের সঙ্গে। এসব অনিয়ম বেশি মাত্রায় করতে গেলে সন্দেহ দেখা দিবে এবং ইন্সপেকশনে ধরা পড়ে যাবেন, তাই খাদ্য কর্মকর্তারা টার্গেটের পুরোটা ক্রয় দেখান না কখনোই। অধিদপ্তরের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কখনোই ধান ক্রয়ের টার্গেট পূরণ হয়নি। নিকট অতীতে শুধুমাত্র ২০১৬ সালেই একবার ডিজি ফয়েজ আহমদের আমলে ধান ক্রয়ের টার্গেট পূরণ হয়েছিল। তিনি বিশেষ তৎপরতা চালিয়ে ধান ক্রয়ের টার্গেট পূরণ করেছিলেন। এছাড়া আর কোনো সময়ই টার্গেট পূরণ করা সম্ভব হয়নি অনেক চাপ প্রয়োগ করেও। চলতি বোরো মৌসুমের সাড়ে ৩ লাখ টনের টার্গেটও পূরণ হতো না- এর প্রমাণ রয়েছে আগের মাসের সংগ্রহের হিসাবেই, যদিও ধানের ফলন ভালো হয়েছে, সরকারি দর এবং বাজার দরের মধ্যে ব্যবধান অন্যান্য বারের চেয়ে বেশি।  
অনুসন্ধান এবং বাস্তব পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ‘যে যার মতো’ কেনার স্বাধীনতা পাওয়ার পরই খাদ্য কর্মকর্তারা ভুয়া কাগজ তৈরির প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছেন। জানা গেছে, অধিদপ্তরের ইস্যুকৃত চিঠির অতিরিক্ত হিসেবে আরসি ফুডদের মাধ্যমে মৌখিকভাবে এ রকমের আভাস দেয়া হয়েছে যে, গুদাম ইন্সপেকশন অর্থাৎ বাস্তবে ধান কেনা হয়েছে কিনা এটা খতিয়ে দেখা হবে না। মূলতঃ এর পরেই ব্যাপকহারে অনিয়ম হতে থাকে। ছিঁটেফোটা কিছু ধান কেনা হলেও কৃষকের কাছ থেকে অস্বাভাবিক অংকের কমিশন আদায় করা হয়েছে। এ রকমের অসংখ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে মাঠ পর্যায় থেকে। যারমধ্যে খুলনা, চাঁদপুর, গাইবান্দা, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ প্রভৃতিসহ প্রায় সবকটি জেলা রয়েছে। 
খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটি (এফপিএমসি) চলতি বোরো মৌসুমে ধান ক্রয়ের টার্গেট নির্ধারণ করেছে সাড়ে তিন লাখ টন। কিন্তু গত ৩০ জুন পর্যন্ত ক্রয় দেখানো হয়েছে অতিরিক্ত ২৬ হাজার ৫৮ টন। এই অতিরিক্ত ক্রয়ের ব্যাপারে মন্ত্রণালয় থেকে কোনো চিঠি ইস্যু হয়নি। তবে এ ব্যাপারে উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদারের মৌখিক নির্দেশ ছিল বলে ডিজি তাঁর অধীন কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন।  
খাদ্য অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাদের সামনে এখন বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, কোনো লিখিত নির্দেশ ছাড়াই মৌখিকভাবে ধান ক্রয় কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করার ঘটনাটা। নিয়ম অনুযায়ী অধিদপ্তর এমনকি মন্ত্রণালয়ও নির্ধারিত সময়ের আগে ধান ক্রয় করতে পারে না। খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটি ৮ মন্ত্রী/উপদেষ্টা এবং ৯ জন সচিব নিয়ে গঠিত। এই কমিটির সিদ্ধান্ত রয়েছে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ধান ক্রয় করা হবে। অতীতে বরাবরই এভাবে হয়ে আসছে। দেখা গেছে, ধানের উৎপাদন বেশি হলেও অর্থাৎ বাজারে দাম কম থাকলেও ৩১ আগস্ট পর্যন্ত টার্গেট পূরণ হয় না। যেহেতু খাদ্য কর্মকর্তারা ধান ক্রয়ের ঝামেলা এড়িয়ে চলতে চান তাই তারা ক্রয়ের প্রবণতা স্লো রাখেন কৌশলে। কিন্তু এবার উপদেষ্টা আলী ইমাম মুজুমদারের কাছ থেকে দুর্নীতি-লুটপাটের ওপেন লাইসেন্স পাওয়ায় পরিস্থিতি রাতারাতি পাল্টে যায়। যারফলে ধান ক্রয় বাবদ সরকারের অনেক বড় অংকের অর্থ ব্যয় হলেও বাস্তবে কৃষকের কোনো উপকার হয়নি। এদিকে ধান ক্রয় অঘোষিতভাবে বন্ধ করার কারণে মাঠ পর্যায়ের খাদ্য কর্মকর্তাদের বিপাকে পড়তে হচ্ছে। কৃষকের প্রশ্নের জবাব তারা দিতে পারছেন না।

নিউজটি আপডেট করেছেন : News Upload

কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ