প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর: মালামাল
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর: মালামাল না পেয়েই ১৭ কোটি টাকা পরিশোধ
স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় :
০৮-১১-২০২৫ ১২:৫০:৪৬ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
০৮-১১-২০২৫ ১২:৫০:৪৬ অপরাহ্ন
মালামাল না পেয়েই ১৭ কোটি টাকা পরিশোধ
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে মালামাল না পেয়েই প্রায় ১৭ কোটি টাকার বিল পরিশোধ করা হয়েছে। এই বিল পরিশোধ করেছেন প্রাণিসম্পদ ঔষধাগারের পরিচালক ডা. মো. শাহিনুর ইসলাম। তবে অবৈধভাবে ঠিকাদারের বিল পরিশোধের বিষয়ে মুল কলকাঠি নেড়েছেন স্টোর অফিসার ডা. আয়শা সুলতানা এবং মহাপরিচালক ড. মো. আবু সুফিয়ান।
সূত্র মতে, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অধীনে সমগ্র বাংলাদেশের বিভাগীয় অফিসসমূহে কৃষকদের নিকট বিনামূল্যে গরু-ছাগল/হাঁস-মুরগীর ঔষধ সরবরাহ করার জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে বাৎসরিক ঔষধ ও ভিটামিন কেনা হয় এবং কেন্দ্রীয়ভাবে গ্রহণ করে সকল দপ্তরে সরবরাহ করা হয়। আর এই কেনাকাটায়ই চলে ব্যাপক দুর্নীতি-লুটপাট। টেন্ডার কোটেশন জালিয়াতির মাধ্যমে পছন্দের ঠিকাদারদের সঙ্গে ক্রয় চুক্তি করা হয়। চুক্তিকৃত মালামাল সরবরাহ না নিয়েই ঠিকাদারের বিল পরিশোধ করা হয়। বিভাগীয় বা মাঠ পর্যায়ের কার্যালয়গুলোতে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও মালামাল সরবরাহ না করেই তাদের কাছ থেকে মালামাল সরবরাহ করা হয়েছে মর্মে লিখিত নেয়া হয়।
প্রাণিসম্পদ ঔষধাগার দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে প্রায় ১৭ কোটি টাকার ঔষধ, ভিটামিন ও মিনারেল কেনার জন্য ৬টি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে। তন্মধ্যে (ক) একমি ল্যাবরেটরীজ প্রায় ১০ কোটি টাকা (খ) মেসার্স সুপার পাওয়ারকে প্রায় ৪ কোটি টাকা। (গ) মেসার্স ফার্মা এন্ড ফার্মকে প্রায় ১.২০ কোটি টাকা, (ঘ) মেসার্স মীর এসোসিয়েটসকে ৬৭ লাখ টাকা (ঙ) মেসার্স এসকে ট্রেডার্সকে প্রায় ২০ লাখ টাকা এবং (চ) মেসার্স খান এন্টারপ্রাইজকে প্রায় ১ কোটি টাকার বিল প্রদান করা হয়। কিন্তু সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, কোন প্রতিষ্ঠানই ৫০% এর বেশী মালামাল সরবরাহ করেনি। এর মধ্যে মীর এসোসিয়েটস এবং একমি ল্যাবরেটরীজ ৩০% মালামাল সরবরাহ করেছে।
অর্থাৎ ১৭ কোটি টাকার মধ্যে মাত্র ৮ কোটি টাকারও কম মালামাল সরবরাহ নিয়ে ঠিকাদারদের পুরো বিল পরিশোধ করে দেয়া হয়েছে। মালামাল গ্রহণ কমিটি সমুদয় বুঝে পাওয়া গেছে মর্মে প্রত্যয়ন দিয়েছে। এবং স্টোর অফিসার ডা. আয়শা সুলতানা ভুয়া স্টক এন্ট্রি দেখিয়েছেন। এ রকমের ভুয়া প্রত্যায়নপত্র ইস্যুর মাধ্যমে এজি অফিস থেকে বিল পাশ করিয়ে ১৭ কোটি টাকার বিল পরিশোধ করা হয়েছে।
মালামাল না নিয়ে ঠিকাদারদের বিল পরিশোধের বিষয়ে প্রাণিসম্পদ ঔষধাগার-এর পরিচালক ডা. শাহিনুর আলমের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, অবশিষ্ট মালামাল খুব শীঘ্রই পাওয়া যাবে এই শর্তে ঠিকাদারের বিল পরিশোধ করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, বিষয়টি ডিজি ড. মো. আবু সুফিয়ান জানেন।
অধিদপ্তরের একাধিক সুত্র জানায়. ড. মো: আবু সুফিয়ান ডিজির দায়িত্ব নেয়ার পর হতে অধিদপ্তর অনেকটাই নিয়ম-কানুনের বাইরে চলছে। টেন্ডার অনিয়ম এবং মালামাল বুঝে না পেয়েই বিল পরিশোধের মতো ঘটনা অহরহই ঘটছে। এভাবেই হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে সরকারের কোটি কোটি টাকা। ডিজি পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ দিতে টেন্ডার জালিয়াতিরও আশ্রয় নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন উপজেলা, জেলা এবং বিভাগীয় পর্যায়ের দপ্তরসমূহে অর্থবছরের শেষ দিকে শুধু অফিসসমুহ মেরামত/ সংরক্ষণের জন্য কয়েক কোটি টাকা রাজস্ব বাজেট থেকে বরাদ্দ দিয়ে কাজ না করিয়েই সমুদয় টাকা ডিজি এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। যদিও ওইসব দপ্তরের অফিস রক্ষণাবেক্ষণের কাজ এবং আনুষাঙ্গিক খাতে খরচসমূহ এলডিডিপি/ সক্ষমতা প্রকল্পসহ অন্যান্য প্রকল্পের অর্থে করানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে বর্তমানে কোন জবাবদিহিতা না থাকায় সরকারি অর্থ লুটের মহোৎসব চলছে এখন। যে যেভাবে পারছেন লুটেপুটে খাচ্ছেন। মালামাল না কিনে, প্রশিক্ষণ না দিয়ে, শুধু ভুয়া বিল/ভাউচারের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করে সমুদয় টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
অর্থবছর শেষের মাস অর্থাৎ জুন মাসে জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস, ঢাকার দপ্তরে প্রায় ১২/১৩ লাখ টাকা এবং ঢাকার মেট্রোর দপ্তরেও বড় অংকের টাকা ভুয়া বিল/ভাউচারের মাধ্যমে উত্তোলন করে সমুদয় টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এছাড়া খোদ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে অর্থ বছরের শেষের দিকে গ্যারেজ মেরামতের নামে ২৫ লাখ টাকা, খাওয়া-দাওয়া (আপ্যায়ন) বাবদ ৪০ লক্ষ টাকা, কম্পিউটার মেরামত বাবদ ৮ লক্ষ টাকা, কম্পিউটারের আনুষাঙ্গিক যন্ত্রপাতি/কাগজ ও কালি কেনা বাবদ ১০ লক্ষ টাকা, মুদ্রণ বাবদ ১০ লক্ষ টাকা, বিভিন্ন ডিসপ্লে ও ব্য্যনার তৈরি বাবদ ৩০ লক্ষ টাকা, প্রশিক্ষণ সামগ্রী ও প্রশিক্ষণ বাবদ ১০ লক্ষ টাকা, বিভিন্ন প্রিন্টিং মালামাল বাবদ ২০ লক্ষ টাকা, এসি ও ফটোকপিয়ার মেরামত বাবদ ৫ লক্ষ টাকা, আসবাবপত্র কেনা বাবদ ১৫ লক্ষ টাকা,
বিভিন্ন প্রকাশনা কেনা বাবদ ৯ লক্ষ টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে কোন গ্যারেজ মেরামত বা নির্মাণ করা হয় নি। কম্পিউটারের জন্য কোন খরচ করা হয়নি। কারন, বিভিন্ন প্রকল্প হতে এ সকল কাজ করা হয়ে থাকে। কোন আসবাবপত্র, বই-পাবলিকেশন ইত্যাদি কেনা হয়নি। আপ্যায়ন বাবদ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য সর্বমোট ১০ লক্ষ টাকা খরচ না হলেও ৪০ লক্ষ টাকার বিল পরিশোধ দেখানো হয়েছে। একইভাবে জাতীয় দিবসগুলোতে ফেস্টুন, ব্যানার বাবদ ৫ লক্ষ টাকা খরচ না হলেও ৩০ লক্ষ টাকা খরচ দেখানো হয়েছে বলে অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ড. মো. আবু সুফিয়ান গত জানুয়ারি থেকে ডিজি পদে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে আছেন। তাঁর চাকরিজীবনের অতীতে রেকর্ড মোটেই ভালো নয়। তিনি ইতিপূর্বে যেসব পদে দায়িত্ব পালন করেছেন প্রায় প্রত্যেকটি কর্মস্থলেই ব্যাপকহারে অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন। আওয়ামী সরকারের আমলে মুজিব কর্ণার স্থাপনের নামেও নিজের আখের গুছিয়ে নিয়েছেন।
জানা গেছে, অধিদপ্তরে বর্তমানে যে সকল পরিচালক কর্মরত আছেন তাদের প্রত্যেকেই বর্তমান ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ড. আবু সুফিয়ানের একাডেমিক সিনিয়র বা রুমমেট। যার ফলে সিনিয়ররা তার রুমে সচরাচর যান না এবং রুমমেটরা তার কোন কমান্ড মানেন না।
নিউজটি আপডেট করেছেন : News Upload
কমেন্ট বক্স