সিআইডি’র জালে ভয়ঙ্কর প্রতারক জাহাঙ্গীর
স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় :
১১-১১-২০২৫ ১২:২৯:২৩ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
১১-১১-২০২৫ ১২:২৯:২৩ অপরাহ্ন
ভয়ঙ্কর প্রতারক জাহাঙ্গীর
অর্ধ যুগ ধরে ডিলারশিপ প্রদান ও চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে নানা কৌশলে নিত্য নতুন দৃষ্টিনন্দন অফিস খুলে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে আসছিল ভয়ঙ্কর প্রতারক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন। প্রতারণা চক্রের মূল হোতা সাধারণ ব্যবসায়ী ও চাকরি প্রত্যাশীদের বিশ্বাস অর্জনের ফাঁদে ফেলে প্রতিদিনতই হাতিয়ে নিচ্ছিল কোটি কোটি টাকা। তার বিরুদ্ধে ঢাকার একাধিক থানাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় রয়েছে অন্তত ২৬টি মামলা। সেই চক্রের মূলহোতা জাহাঙ্গীর অবশেষে সিআইডি’র জালে ধরা পড়েছে। এদিকে ঢাকা মহানগরের মোহাম্মদপুর ও দারুস সালামসহ বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের পৃথক অভিযানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের ৭ নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ৪৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার পুলিশ ও সিআইডি সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) জানায়, গত ২৮ অক্টোবর বিকেলে গোপন সংবাদে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় বিশেষ অভিযান চালায় সিআইডি’র ঢাকা মেট্রো পূর্ব বিভাগের একটি দল। এ সময় অর্ধ যুগ ধরে নিরীহ সাধারণ ব্যবসায়ী ও চাকরি প্রত্যাশীদের সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ চক্রের মূলহোতা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। তিনি কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ থানার রামনগর নিবাসী মো. রফিকুল ইসলাম ও জহুরা খাতুন দম্পতির ছেলে। বর্তমানে থাকেন রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানাধীন শেখেরটেক ৬ নম্বর রোডের শেষ মাথায়।
এ তথ্য নিশ্চিত করে সিআইডি’র বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান বলেন, বিভিন্ন ভুক্তভোগী ব্যক্তির অভিযোগ ও সিআইডির প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসে, গ্রেপ্তারকৃত মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন ভয়ঙ্কর প্রতারক চক্রের মূল হোতা। তিনি বিভিন্ন ভুয়া কনজুমারস ফুড প্রোডাক্টস কোম্পানির নামে ডিলারশিপ প্রদান ও চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ ব্যবসায়ী ও চাকরি প্রত্যাশীদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিলেন। প্রতারণার কৌশল হিসেবে সে প্রথমে বিভিন্ন জায়গায় সুন্দর পরিপাটি অফিস ভাড়া নিতো এবং সেখানে বিভিন্ন কনজুমারস প্রোডাক্টস মজুদ করতো। এ জন্য প্রথমে সে স্থানীয় খোলা বাজার থেকে ভালো গুণসম্পন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য (যেমন, চিনি,ডাল ইত্যাদি) ক্রয় করতো এবং সেগুলো ভুয়া নামীয় মোড়কে প্যাকেটজাত করে বাজার দর থেকে তুলনামূলক কম দামে পাইকারি ক্রেতাদের কাছে বিক্রয় করার জন্য বিজ্ঞাপন দিতো। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছাড়াও লিফলেট বিতরণ ও অন্যান্য মিডিয়াতে ডিলারশিপ এর বিজ্ঞাপন প্রচার করে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতো। আকৃষ্ট ক্রেতাগণ ডিলারশিপ নেওয়ার আগ্রহ প্রদান করলে প্রথমে সে বাজার দর থেকে কম মূল্যে পণ্য সরবরাহ করতো। এভাবে কিছুদিন মালামাল সরবরাহ করে বিশ্বাস অর্জন করার পরে আরও বড় ও সাশ্রয়ী অফার দিয়ে ডিলারদের কাছ থেকে বড় অঙ্কের টাকা সংগ্রহ করে পণ্য না দিয়েই সে অফিস বন্ধ করে অন্যত্র চলে যেত।
সিআইডি’র এ কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসে, অর্ধ যুগেরও বেশি সময় ধরে পরিচালিত এই প্রতারণার কাজে সে বিভিন্ন স্থানে ১৫ টিরও বেশি ভুয়া অফিস খুলে বিভিন্ন সময় সাধারণ মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলত। মূলত, কমদামে পণ্য সরবারহ করার অফারই তার প্রতারণার মূল হাতিয়ার। সর্বশেষ ডিএমপি’র মোহাম্মদপুর এলাকার রেসিডেন্সিয়াল কলেজের পাশে অবস্থিত একটি বিল্ডিং এর ৪র্থ তলায় ‘তালুকদার এন্টারপ্রাইজ’ নামের অফিস খুলে প্রতারণাকালীন সে সিআইডির ঢাকা মেট্রো পূর্ব বিভাগের একটি দলের কাছে হাতেনাতে গ্রেপ্তার হয়।
জসীম উদ্দিন খান বলেন, জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে সম্প্রতি মতিঝিল থানায় রুজু হওয়া মামলা নং-২২, তারিখ-২৯/১০/২০২৫ খ্রি. ছাড়াও আরও ২৫টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। সবগুলো মামলা প্রায় একই রকম প্রতারণামূলক। ঢাকা মেট্রোপলিটনের বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ ও নরসিংদী জেলায় রুজু হওয়া এসব মামলায় অসংখ্য ভুক্তভোগী রয়েছে।
তিনি বলেন, প্রাথমিক তদন্তে আরও জানা যায়, শুধু ডিলারশিপ নয় চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়েও প্রতারণার ঘটনা ঘটিয়েছে চক্রটি। অফিসের বিভিন্ন পদে লোভনীয় বেতনে চাকরি দেওয়ার নাম করে জীবন বৃত্তান্ত ও অন্যান্য তথ্যের পাশাপাশি চাকরি প্রত্যাশীদের কাছ থেকে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা নিতো। পরবর্তীতে বেতন প্রদানের পূর্বেই রাতের আঁধারে অফিস বন্ধ করে গা ঢাকা দিতো। গ্রেপ্তারকৃত মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন দীর্ঘ অর্ধ যুগেরও বেশি সময়ে অন্তত ৩০০ জন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর কাছ থেকে এরকম প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে সে। গ্রেফতারকালীন তার কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত কর্মী ও ডিলারশিপ নিয়োগের জন্য ভিকটিমদের নাম ও ছবি সম্বলিত আবেদনপত্র, কর্মী নিয়োগের ছবিসহ জীবনবৃত্তান্ত, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির বিভিন্ন পরিচয় সম্বলিত ভিজিটিং কার্ড, পণ্যের ভুয়া মূল্য তালিকা, কোম্পানির পণ্যের নমুনা এবং প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও কম্পিউটার জব্দ করা হয়েছে।
সিআইডি’র বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) বলেন, বর্তমানে মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম সিআইডি’র ঢাকা মেট্রো পূর্ব ইউনিট পরিচালনা করছে। গ্রেপ্তারকৃতকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দকরণ ও রিমান্ডের আবেদনসহ পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন, অপরাপর সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের জন্য সিআইডি’র তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : News Upload
কমেন্ট বক্স