ঢাকা , বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫ , ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অনুসন্ধানে দুদক

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ১৩-১১-২০২৫ ০৭:৫৩:২৩ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ১৩-১১-২০২৫ ০৭:৫৩:২৩ অপরাহ্ন
ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অনুসন্ধানে দুদক ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের
ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের (ইবিএল) চেয়ারম্যান মো. শওকত আলী চৌধুরী ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু হয় ৯ অক্টোবর।

বুধবার (১৫ অক্টোবর) জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

দুদকের নথিতে উল্লেখ করা হয়, ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান শওকত আলী চৌধুরী ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যাংকের মাধ্যমে ৮ হাজার কোটি টাকা লেনদেন, এলসির মাধ্যমে জাহাজ ভাঙার নামে অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার এবং শেল কোম্পানির মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর শওকত আলী চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ জমা পড়ে। গত ৩০ জুন ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. শওকত আলী চৌধুরী ও তার পরিবারের সদস্যদের সব ব্যাংক হিসাব জব্দ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণাধীন আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

এর আগে ১৪ ফেব্রুয়ারি ইবিএলের চেয়ারম্যান মো. শওকত আলী চৌধুরী ও তার পরিবার ‘অস্বাভাবিক ব্যাংকিং লেনদেন’ ও ‘হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার’ করেছেন— এমন অভিযোগ তুলে তা দ্রুত অনুসন্ধানে দুদক চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি দেন আইনজীবী কামরুল ইসলাম।

দুদক চেয়ারম্যানকে পাঠানো চিঠিতে আইনজীবী কামরুল ইসলাম উল্লেখ করেছেন, অভিযুক্ত শওকত আলী চৌধুরী ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে আট হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ লেনদেনের তথ্য পেয়েছে বিএফআইইউ। শওকত আলী চৌধুরী, তার স্ত্রী তাসমিয়া আম্বারীন, কন্যা জারা নামরীন ও ছেলে জারান আলীর নামে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ১৮৭টি হিসাব রয়েছে। এছাড়া তাদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে আরও ১৪৬টি হিসাব রয়েছে। চলতি বছরের ১৫ জুন পর্যন্ত এসব হিসাবের লেনদেনের পরিমাণ ৮ হাজার ৪০৭ কোটি টাকারও বেশি।

অভিযোগে বলা হয়, শুধু শওকত আলী চৌধুরীর ঢাকা ব্যাংকের জুবিলী রোড শাখায় খোলা হিসাবেই জমা হয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৯৮৭ কোটি টাকা। তদন্তে উঠে এসেছে, এসব লেনদেনের মাধ্যমে কর ফাঁকি এবং অর্থ পাচারের সম্ভাবনা রয়েছে।

এছাড়া শওকত আলী চৌধুরীর ব্যক্তিগত ইবিএল সেভিংস অ্যাকাউন্ট থেকে ১২৫ বার নগদ অর্থ উত্তোলন করেছেন ইস্টার্ন ব্যাংকের কোম্পানি সেক্রেটারি মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন। এছাড়া তার কন্যা জারা নামরীনের ইবিএল আগ্রাবাদ শাখার হিসাবের ২০১৫ সালের এপ্রিলে এক মাসে জমা হয়েছে ৩১ কোটি টাকা, যা তার পরিচিত আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। একইভাবে ছেলে জারান আলীর মিডল্যান্ড ব্যাংক হিসাবেও অতিরিক্ত অর্থ জমা ও উত্তোলনের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

অভিযোগে বলা হয়, শওকত আলী চৌধুরী ২০১২ সাল থেকে জাহাজ ভাঙার নামে ১৪১টি এলসি খুলেছেন। এর মধ্যে ১১টির ক্ষেত্রে আমদানি করা ভেসেল চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছানোর প্রমাণ মেলেনি। তদন্তে দেখা গেছে, এসব এলসির বেনিফিসিয়ারি হিসেবে ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে নিবন্ধিত তিনটি শেল কোম্পানি ব্যবহৃত হয়েছে, যাদের প্রকৃত অস্তিত্বও প্রশ্নবিদ্ধ।

এছাড়া শওকত আলী চৌধুরী রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে ব্যবসা বিস্তার করেছেন। তিনি চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এ জে এম নাসির, শেখ হাসিনার সাবেক এপিএস আলাউদ্দিন নাসিম, ব্যবসায়ী নাফিস শারাফাত এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাতের সঙ্গে অংশীদারিত্বমূলক ব্যবসায় জড়িত ছিলেন। সিডিনেট কমিউনিকেশন লিমিটেডে তাদের যৌথ মালিকানার তথ্য আরজেএসসি রেকর্ডে পাওয়া গেছে। শওকত আলী চৌধুরী সিঙ্গাপুর, দুবাই ও যুক্তরাজ্যে অবৈধ অর্থে সম্পদ গড়ে তুলেছেন। সিঙ্গাপুরে তার নামে দুটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে, যার একটি সম্প্রতি তিনি বিক্রি করেছেন বলে জানা গেছে।

আইনজীবী কামরুল ইসলামের চিঠিতে বলা হয়েছে, দেশের হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের এ ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে অন্যরা একই অপরাধে উৎসাহিত হবে। তাই তিনি দ্রুত দুদকের অনুসন্ধান শুরু করার দাবি জানান।

নিউজটি আপডেট করেছেন : News Upload

কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ