শামীমের বিরুদ্ধে
“মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের শামীমের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও ‘ফিটিং’ কাণ্ডের অভিযোগ”
স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় :
১৬-১১-২০২৫ ১২:১৬:০০ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
১৬-১১-২০২৫ ১২:১৬:০০ অপরাহ্ন
শামীম আহমেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামীম আহমেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম, চাঁদাবাজি এবং কথিত ‘স্বাধীন বাংলা মাদকবিরোধী কমিটি’র মাধ্যমে নৈরাজ্য সৃষ্টির অসংখ্য অভিযোগ উঠেছে। মাদক নিয়ন্ত্রণের নামে চাঁদাবাজি ও দুর্নীতিতে খোদ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর যেন অনিয়মের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। আর এই নিয়ন্ত্রক অধিদপ্তরের ‘অনিয়ন্ত্রিত রাজা’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন শামীম আহমেদ, যিনি বর্তমানে উপ-পরিচালক (উত্তর) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
গুলশান-বনানী এলাকার বিভিন্ন স্পট ও গোপন সূত্রে উপ-পরিচালক শামীম আহমেদ সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। অভিযোগ রয়েছে, ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে ক্ষমতাসীনদের আশীর্বাদ পুষ্ট হয়ে শামীম আহমেদ ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল ছিলেন। সে সময় অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেড়ে ওঠা অনুমোদনহীন রেস্টুরেন্ট, বার, সিসা লাউঞ্জসহ বিভিন্ন স্পট থেকে তিনি কোটি কোটি টাকা আয় বহির্ভূত অর্থ উপার্জন করেছেন। রাজধানীর ধনীদের কাছে বিলাসী আবাসন হিসেবে খ্যাত পূর্বাচলে তার একাধিক প্লট এবং পৈতৃক এলাকায় প্লট, ধানিজমি সহ অসংখ্য সম্পদের মালিক বনে গেছেন বলেও জানা গেছে।
বেপরোয়া শামীম ও ‘স্বাধীন বাংলা মাদকবিরোধী কমিটি’
সূত্র জানায়, বর্তমানে শামীম আহমেদ রাজধানীর উত্তরের উপ-পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর আগের থেকেও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। গুলশান-বনানী এলাকার অভিজাত হোটেল, সিসা লাউঞ্জ ও বার থেকে অভিযানের ভয় দেখিয়ে তার নিয়ন্ত্রিত ‘স্বাধীন বাংলা মাদকবিরোধী কমিটি’ নামক একটি কথিত ‘কমিটি সিন্ডিকেট’ মোটা অংকের অর্থ আদায়ের মিশনে নেমেছে। কথিত ওই কমিটির সদস্যরা শামীম আহমেদের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করেন। এসব ভয়-ভীতির পরে চাহিদা অনুযায়ী অর্থ না মিললে কখনও কখনও উক্ত প্রতিষ্ঠানের সামনে কথিত কমিটির ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। কথিত রয়েছে, উক্ত স্বাধীন বাংলা মাদকবিরোধী কমিটির উপদেষ্টা হিসেবে সরাসরি সম্পৃক্ত রয়েছেন শামীম আহমেদ। এমন মানববন্ধনের পর উপ-পরিচালক শামীম আহমেদ অভিযান পরিচালনা করে কাঙ্ক্ষিত অর্থ হাতিয়ে নেন।
সম্প্রতি বনানীর ১১ নম্বর রোডে ‘হেইজ সিসা লাউঞ্জে’ এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে। অনৈতিক সুবিধা না পেয়ে উক্ত প্রতিষ্ঠানের সামনে মানববন্ধন করেছিল স্বাধীন বাংলা মাদকবিরোধী কমিটি। সেই মানববন্ধনের কয়েকদিনের মধ্যেই প্রতিষ্ঠানটিতে অভিযান পরিচালনা করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ।
প্রমাণের বিনাশ ও রাজনৈতিক প্রভাব
শামীমের নেতৃত্বে পরিচালিত অধিকাংশ অভিযানে অর্থ লেনদেন ও অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার কারণে প্রতিষ্ঠানের সিসি ক্যামেরার যন্ত্রাংশ ভেঙে নষ্ট করা হয়। পরে সেগুলো জব্দ তালিকায় যুক্ত করা হয়, যাতে কোনো প্রমাণ পরবর্তীতে কেউ শনাক্ত করতে না পারেন। রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান-বনানীতে উক্ত কথিত কমিটির অধিকাংশ সদস্যই ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে যুক্ত বলে জানা গেছে।
মাদকের ভয়াল থাবা রোধে কাজ করা আইন প্রয়োগকারী প্রতিষ্ঠানে এমন দুর্নীতিবাজ, অর্থলোভী, চাঁদাবাজ ও ধান্দাবাজদের দৌরাত্ম্যের কারণে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অনেক সফলতা থাকলেও তা ম্লান হয়ে যাচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গুলশানের একটি অভিজাত এলাকার হোটেল কর্তৃপক্ষ সংবাদমাধ্যমকে জানায়, শামীম আহমেদ বর্তমান পদে দায়িত্বে বসার পর থেকে এলাকার সকল ব্যবসায়ী আতঙ্কে রয়েছেন। কথিত স্বাধীন বাংলা মাদকবিরোধী কমিটির ব্যানারে গুলশান-বনানী জুড়ে চলছে কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজি ও ফিটিং বাণিজ্য, যা সকলের কাছে ‘ওপেন সিক্রেট’।
টাকার নেশায় বুদ কর্মকর্তা!
সংশ্লিষ্ট খাতের অনেকেই মনে করেন, মাদকের ছোবল নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা নিজেই টাকার নেশায় বুদ হয়ে থাকলে ‘অভিযান নামক নাটক’ মঞ্চস্থ করে সমাজের ও রাষ্ট্রের মাদক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।
সূত্র আরও জানায়, বিগত সরকারের আমলে শামীম আহমেদ আওয়ামী লীগের নামধারী বিভিন্ন সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদকসহ এমন সময়ে তার সবগুলো বদলিই ছিল গুরুত্বপূর্ণ ও লাভজনক। স্বাধীন বাংলা মাদকবিরোধী কমিটির উপদেষ্টা হিসেবেও তিনি ওই সংগঠনের অফিসে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। এছাড়াও শামীমের ‘ক্যাশিয়ার’ হিসেবে পরিচিত উপ-পরিদর্শক নাজমুলের মাধ্যমে নিয়মিত চাঁদা তোলার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : News Upload
কমেন্ট বক্স