ঢাকা , বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫ , ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আনোয়ারের অঢেল সম্পদ

​'দানে দানে' গড়া আনোয়ারের অঢেল সম্পদ

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ১৬-১১-২০২৫ ১২:২৯:০২ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ১৬-১১-২০২৫ ১২:২৯:০২ অপরাহ্ন
​'দানে দানে' গড়া আনোয়ারের অঢেল সম্পদ আনোয়ারের
স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আনোয়ার আলী। এখন বিপুল অর্থ-সম্পদ তার। সম্পদ বিবরণীর তথ্যমতে, সবই তিনি আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে দানে পেয়েছেন। বাবা, ভাইবোন, মামা, চাচাশ্বশুর, চাচাতো শ্যালিকার দান করা সম্পদে হয়েছেন কোটি কোটি টাকার মালিক।

আনোয়ার আলীর সম্পদের মধ্যে রাজধানীর বসুন্ধরায় বাবা মরহুম ওয়াজেদ আলীর 'দেওয়া' পাঁচ কাঠা জমি, মোহাম্মদপুরে চাচাতো শ্যালিকার 'দানে' পাঁচতলা ভবন, ঠাকুরগাঁওয়ে রয়েছে ভাইবোনদের 'দেওয়া' একরের পর একর জমি।

দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তার জমা দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে এরকম তথ্যই দিয়েছেন আনোয়ার আলী। এর বাইরে চাচাশ্বশুরের কাছ থেকে প্রায় এক কোটি টাকা ও ৫২২ শতাংশ জমি 'দান' হিসেবে নিয়েছেন বলে দুদক জানতে পেরেছে।

সম্পদ বিবরণীতে আনোয়ার আলীর নিজের ৮০ লাখ ২৩ হাজার ৮২৮ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে পূর্বাচল নতুন শহরের প্রকল্পে তিন কাঠাসহ রয়েছে ৮৮৬ শতক জমি। দুদক সূত্র বলছে, বাস্তবে তার সম্পদের পরিমাণ অনেক বেশি। তার সম্পদের একটি বড় অংশ রয়েছে স্ত্রী ও আত্মীয়স্বজনের নামে। তাই কাগজে-কলমে অনেকটাই নিরাপদে আছেন তিনি।

দুদকের তদন্তে এসব সম্পত্তি নিয়ে আপত্তি না এলেও রাজধানীর ধানমন্ডির একটি ফ্ল্যাট নিয়ে তদন্ত চলছে। সম্পদ বিবরণীতে ওই ফ্ল্যাটের দাম এক কোটি ৩২ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে। তবে দুদক বলছে, এর দাম প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা। এর জবাবে আনোয়ার আলী বলছেন, এটা মিথ্যা। তিনি এক কোটি ৩২ লাখ টাকা দিয়েই ওই ফ্ল্যাট কিনেছেন। তাও একজন আত্মীয়ের মধ্যস্থতায় তার স্ত্রী দিলরুবা আলীর নামে এ ফ্ল্যাট কেনা হয়।

জানা গেছে, আনোয়ার আলী তার ঠাকুরগাঁওয়ের বাড়িতে গড়ে তুলেছেন ডেইরি ও পোলট্রি ফার্ম, কমিউনিটি সেন্টারের ব্যবসা। তবে এসব ব্যবসার মালিকানা তার নামে নয়। এলাকাবাসী বলছেন, আনোয়ারই এসবের মালিক। সম্পদ বিবরণীতে দেওয়া অর্ধকোটি টাকার পোলট্রি ফার্মের মালিক তার স্ত্রী দিলরুবা আলী, কমিউনিটি সেন্টারের মালিক তার মামা ও চাচাশ্বশুর। শুধু তার স্ত্রীর নামে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে পাঁচতলা ভবন, ধানমন্ডিতে ফ্ল্যাট, বাড্ডায় তিন কাঠা, ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় দুই কাঠা, নারায়ণগঞ্জে পাঁচ কাঠা জমিসহ ব্যাংকে ৫০ লাখ টাকা এফডিআর এবং ঠাকুরগাঁও শহরে কয়েক একর জমি রয়েছে।

জানা গেছে, আনোয়ার আলীর বিরুদ্ধে ২০০২ সালে অনুসন্ধান শুরু করে তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরো। এরপর দীর্ঘদিন ধরে ওই অভিযোগ পড়ে ছিল। এ সময়ের মধ্যে তিনি তার সব আয় বৈধ করে নেন বলে অভিযোগ ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালে দুদকের পক্ষ থেকে তাকে নোটিশ দিয়ে নথিপত্র চাওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সাল পর্যন্ত তার আয়-ব্যয়ের নথি পর্যালোচনা করে দুদক। শেষে কোনো অনিয়ম না পেয়ে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে দায়মুক্তি দিয়ে অভিযোগটি নিষ্পত্তি করা হয়।

আনোয়ার আলীর বিরুদ্ধে নতুন অনুসন্ধান শুরু হয় ২০১৮ সালের মাঝামাঝিতে। আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ ২৯ লাখ ৯৮ হাজার ৭০৬ টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ৫ মে রমনা থানায় দুদক আইন, ২০০৪-এর ২৭(১) ধারায় মামলা করেন দুদকের উপপরিচালক মো. নাসির উদ্দিন। এতে বলা হয়, আনোয়ার আলীর আয়কর নথিতে গৃহ-সম্পত্তি, অন্যান্য উৎস্য ও কৃষিজমি থেকে ৩২ লাখ ৭৮ হাজার ৭০০ টাকা আয়ের রেকর্ডভিত্তিক কোনো প্রমাণ নেই।

স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, আনোয়ার আলী বর্তমানে অধিদপ্তরের সার্কেল-৬ সিলেটের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত। দুদকের ঝামেলা এড়ানোর জন্য নিজের নামে সম্পত্তি না করে আত্মীয়স্বজনের নামে করছেন। আবার যেটুকু সামনে আসছে তাও তিনি প্রভাব খাটিয়ে, অবৈধ উপায়ে সবকিছু বৈধ করছেন।

দুদক সূত্র জানায়, একসময় জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ করা হলেও এবার তার বিরুদ্ধে শতকোটি টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদ আর মামলা করার মধ্যেই এটি সীমাবদ্ধ রয়েছে। দুদকের আইন অনুযায়ী ছয় মাসের মধ্যে মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেওয়ার বিধান থাকলেও তার ব্যত্যয় ঘটছে এখানে।

আনোয়ার আলীর বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ঠিকাদার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী বরাবর জমা দেওয়া পৃথক লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, আনোয়ার আলী হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচার করছেন। সেই টাকা আত্মীয়দের মাধ্যমে ঋণ নিয়েছেন বলে প্রকাশ করা হচ্ছে। দুর্নীতির মাধ্যমে ঠিকাদারদের হয়রানি এবং আত্মীয়স্বজনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারি ব্যবসার মাধ্যমে শতকোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

আনোয়ারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও ঠিকাদারদের হয়রানির অভিযোগ দুদকের পাশাপাশি তদন্ত করছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। সিলেটেও তার দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী বরাবর অভিযোগ এসেছে। গঠন করা হয়েছে একাধিক তদন্ত টিম।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ার আলী দাবি করেন, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। দেশের জন্য, দেশের সম্পদ রক্ষার জন্য তিনি বেশ কয়েকটি বড় অনিয়মের তদন্ত করায় তার বিরুদ্ধে এ ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।

আনোয়ার বলেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি বলেই ২০১৭ সালে দুদক তাকে অব্যাহতি দিয়েছে। এখন আবার একই অভিযোগ করা হচ্ছে, যার সত্যতা নেই। 

নিউজটি আপডেট করেছেন : News Upload

কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ