যমুনা অয়েলে ‘সুপার পাওয়ার’ মাসুদুল ইসলাম
স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় :
১৬-১১-২০২৫ ০২:৪০:২৯ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
১৬-১১-২০২৫ ০২:৪০:২৯ অপরাহ্ন
মো. মাসুদুল ইসলাম
নিষিদ্ধ আওয়ামী সরকারের ছত্রছায়ায় যমুনা অয়েল কোম্পানিতে ‘অদ্ভুত ক্ষমতাধর’ হিসেবে পরিচিত হয়েছেন মো. মাসুদুল ইসলাম। তিনি একসাথে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন—মহাব্যবস্থাপক (মানবসম্পদ), মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) এবং কোম্পানি সচিব। সম্প্রতি চলতি মাসের ৩ তারিখে তাঁকে বিটুমিন সরবরাহ কমিটির আহ্বায়কও করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা কুদরুত-ই-ইলাহির বিশেষ আশীর্বাদেই তাঁর এই অভূতপূর্ব প্রভাব বলে অভিযোগ রয়েছে। জানা গেছে, দুজনের গ্রামের বাড়ি একই এলাকায় এবং সম্পর্কও অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ।
২০১৬ সালে যমুনা অয়েলের একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি মাসুদুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের প্রমাণ পেলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং পরবর্তী সময়ে তাঁকে পদোন্নতি দেওয়া হয়।
প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে দুর্নীতিবাজদের পক্ষেই বরাবর অবস্থান নিয়েছেন মাসুদুল ইসলাম। সম্প্রতি ফতুল্লা ডিপো থেকে প্রায় পৌনে চার লাখ লিটার ডিজেল গায়েবের ঘটনায় অভিযুক্ত এজিএম (অপারেশন-ডিপো) শেখ জাহিদ আহমেদ ও ডিপো ইনচার্জ মোহাম্মদ আসলাম খান আবু উলায়ীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও তদন্তের স্বার্থে সাময়িক বরখাস্তের পরিবর্তে তাঁদের পদোন্নতির প্রস্তাব দেন তিনি।
যমুনা সূত্রে জানা গেছে, ২৩ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে বিকেল ৫টা ১৫ মিনিটে ঢাকা লিয়াজোঁ অফিসে পদোন্নতি সংক্রান্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের উপসচিব (পরিকল্পনা-২ অধিশাখা) আসমা আরা বেগম। তিনি দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত ওই দুই কর্মকর্তার নাম তালিকায় দেখে আপত্তি জানান, ফলে তাঁদের পদোন্নতি স্থগিত করা হয়।
এদিকে, দুই সিবিএ নেতা মুহাম্মদ এয়াকুব ও জয়নাল আবেদীন টুটুলের বিরুদ্ধেও নানাবিধ অভিযোগ থাকলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। এদের বদলির প্রসঙ্গ উঠলেই মাসুদুল ইসলামের মুখের পুরনো কথা—“নির্বাচিত সিবিএ নেতাদের বদলিতে জটিলতা আছে।” অথচ ২০২৪ সালের ২৮ আগস্ট বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আইন শাখা থেকে জারি করা এক চিঠিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়, শ্রম আইনের ১৮৭ ধারা জ্বালানি খাতে প্রযোজ্য নয়—অর্থাৎ তাঁদের বদলি আইনত সম্ভব।
২০২০ সালের ২১ জুন মাসুদুল ইসলাম ছিলেন ডিজিএম (অ্যাকাউন্টস)। সে সময় জিএম (অপারেশন) বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে তিনি মংলা ডিপোর এপ্রিল ২০২০ মাসের ২৯,৯২৫ লিটার তেল ক্ষতির বিষয়ে ব্যাখ্যা চান। তবে পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও এর কোনো সুরাহা হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, অভিযুক্ত তৎকালীন ডিপো ইনচার্জ আনিসুর রহমানকে বরিশাল ডিপোতে পদোন্নতির ব্যবস্থা করে দেন মাসুদুল ইসলাম।
১৯৯৬ সালের ১৪ অক্টোবর তিনি যমুনা অয়েলে চাকরি শুরু করেন। চাকরিজীবনে গাড়ি কেনার ঋণ একবারের জন্য প্রাপ্য হলেও তিনি পেয়েছেন দুইবার। দ্বিতীয়বারের ঋণ হিসেবে পাওয়া ২০ লাখ টাকার মধ্যে গাড়ি না কিনে বিনিয়োগ করেন শেয়ারবাজারে। বিষয়টি প্রকাশ পেলে বছরখানেক পর ফেরত দেন সেই টাকা।
বর্তমানে তিনি শত কোটি টাকার মালিক। চট্টগ্রামের হালিশহরের ব্লক-এল, লেন-১, রোড-১, বাড়ি নং ২২-এর দ্বিতীয় তলায় তাঁর নিজস্ব ফ্ল্যাট রয়েছে। চউক উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বাকলিয়া কমপ্লেক্স আবাসিক প্রকল্পে তাঁর দুটি প্লট আছে, যার একটিতে ইতিমধ্যে ভবন নির্মাণ শুরু হয়েছে। একই এলাকায় রয়েছে একটি বড় ডেইরি ফার্ম। এছাড়া নামে-বেনামে শত কোটি টাকার শেয়ার রয়েছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : News Upload
কমেন্ট বক্স