ঢাকা , বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫ , ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

​ ভাঙ্গুড়া পৌরসভায় কাজ না করেই ৮১ লাখ টাকা উঠানোর চেষ্ট।একাধিক প্রকল্পে ভয়াবহ অনিয়ম

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ১৮-১১-২০২৫ ০৩:০৮:১১ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ১৮-১১-২০২৫ ০৩:০৮:১১ অপরাহ্ন
​ ভাঙ্গুড়া পৌরসভায় কাজ না করেই ৮১ লাখ টাকা উঠানোর  চেষ্ট।একাধিক প্রকল্পে ভয়াবহ অনিয়ম ভাঙ্গুড়া পৌরসভায়
ভাঙ্গুড়া পৌরসভায় আগে থেকেই অন্যান্য দপ্তরের অর্থায়নে সম্পন্ন হওয়া সড়কে পুনরায় প্রকল্প দেখিয়ে ৮১ লাখ টাকার তিনটি প্রকল্পের বিল উঠিয়ে নেওয়ার  চেষ্টা এবং একাধিক প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। পৌরসভার কিছু কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের যোগসাজশে অন্তত তিনটি প্রকল্পে কোনো কাজ না করেই বিল উত্তোলনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
কাজ শেষ—তারপরও নতুন প্রকল্প
তথ্য যাচাই করে দেখা যায়, সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) ২০২২–২৩ অর্থবছরে ভাঙ্গুড়া পৌর এলাকার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের সংস্কার কাজ সম্পন্ন করে। কিন্তু ২০২৩–২৪ অর্থবছরে পৌরসভা ওই একই সড়কে আবারও সংস্কারের দরপত্র আহ্বান করে।
পৌরসভার আহ্বান করা তিনটি প্রকল্পের বরাদ্দ ছিল—
শিশুকুঞ্জ থেকে শিমুলতলা: ২৫ লাখ টাকা শিমুলতলা থেকে জগতলা: ৩৫ লাখ ৮১ হাজার টাকা বাজার চারমাথা মোড় থেকে কালিবাড়ী বাজার: ২৬ লাখ ১৫ হাজার টাকা মোট বরাদ্দ ৮১ লাখ টাকা।
এসব সড়কের কাজ ইতিমধ্যে সওজের তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন করেছিলেন পাবনার ঠিকাদার মিঠু সরদার ও ওহিদুল ইসলাম। এরপরও পৌরসভা এসব প্রকল্প বাতিল না করে গোপন রাখে। বিষয়টি নজরে এলে গত ২৬ আগস্ট তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক নাজমুন নাহার প্রকল্প বাতিলের প্রস্তাব পাঠান। তবে তাঁর বদলির পরও এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এসব প্রকল্প বাতিল হয়নি।

কাজ না করেও বিল উত্তোলন
একইভাবে শরৎনগর বাজারের কলেজ মোড় থেকে বাংলা স্যারের মোড় পর্যন্ত প্রায় ১৫০ মিটার সড়কের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। অথচ এর আগেই এলজিইডির অর্থায়নে সেই সড়কের সংস্কার কাজ শেষ হয়েছিল। কাজ না করেই প্রকল্পের ঠিকাদার সঙ্গীত কুমার পাল বিল তুলে নেন। বিষয়টি জানাজানি হলে তিনি পরে বাধ্য হয়ে কাজ শুরু করেন।

শরৎনগর বাজারে গরুহাট থেকে জিগাতলা পর্যন্ত ২০০ মিটার সড়কের ক্ষেত্রেও একই অভিযোগ। এ প্রকল্পের বিল তোলা ঠিকাদার রতন আহমেদও দীর্ঘদিন কোনো কাজ না করে সম্প্রতি দায়সারাভাবে কাজ শুরু করেছেন।
সরেজমিনে নিম্নমানের কাজ
এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ সড়কে নিম্নমানের কার্পেটিং করা হচ্ছে। কোথাও টেক কোড বা প্রাইম কোড ছাড়াই সরাসরি বিটুমিন ছড়িয়ে কার্পেটিং করা হচ্ছে। উপজেলা পরিষদ চত্বরে একটি সড়কের কার্পেটিং সংস্কারের পরদিনই বসে গেছে। কাজ চলাকালে পৌর প্রকৌশলী উপস্থিত থাকলেও তাঁরা কোনো ব্যবস্থা নেননি।

অভিযোগ অস্বীকার–দায় এড়ানোর চেষ্টা
এ বিষয়ে ঠিকাদার সঙ্গীত কুমার পাল বলেন, ‘অনেক আগে এসব কাজ আমরা কিনেছি। সব কাজই করা হবে, যদিও এখন আমাদের লস হবে।’ তবে দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকার কারণ তিনি জানাননি।
পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘সওজ বা এলজিইডি যে প্রকল্পগুলো করেছে, সেগুলো বাতিলের জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে।’ প্রকল্প এখনো বাতিল হয়নি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একই প্যাকেজে একাধিক প্রকল্প থাকায় আলাদা করে বাতিলের সুযোগ নেই। সওজ যেগুলো করেছে, সেগুলো বাদ দিয়ে ফাইনাল বিল পাঠানো হয়েছে।’
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও বর্তমান পৌর প্রশাসক মিজানুর রহমান বলেন, ‘এসব প্রকল্প আগের মেয়র ও আগের প্রশাসনের সময়ের। সওজ বাস্তবায়ন করা তিন প্রকল্প বাতিলের প্রস্তাব আগের প্রশাসক ২৬ আগস্ট পাঠিয়েছেন। কেন একই সড়ক নতুন অর্থবছরে আবার প্রকল্প দেওয়া হলো—এসব বিষয়ে জানতে হবে পৌর প্রকৌশলীর কাছে।’

স্থানীয়দের অভিযোগ,স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রকল্প বাতিল না করে ও আগে সম্পন্ন হওয়া সড়কেও নতুন করে দরপত্র আহ্বান করে অর্থ আত্মসাতের চেষ্টা চলছে। প্রশাসনিক পরিবর্তনের পর কেউ কেউ কাজ শুরু করলেও কয়েকজন ঠিকাদার নাকি বিল ফেরতের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

নিউজটি আপডেট করেছেন : News Upload

কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ