পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের জন্য ২০ কোটির
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের জন্য ২০ কোটির প্রার্থী পাওয়া যাচ্ছে না, তাই সচিব নিয়োগ হচ্ছে না!
স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় :
০৮-১১-২০২৫ ১২:৪৬:৫০ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
০৮-১১-২০২৫ ১২:৪৬:৫০ অপরাহ্ন
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগে ইতিপূর্বে সচিব পদে ছিলেন মো. নজরুল ইসলাম। গত ২৫ মার্চ তিনি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে নিয়োগ পান। সেই থেকে ছয় মাস ধরে এই সচিব পদটি শূন্য রয়েছে। এই সময়ে একেক জনকে রুটিন দায়িত্ব দিয়ে চালাচ্ছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। বর্তমানে রুটিন দায়িত্বে আছেন মো. ইসমাইল হোসেন। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের জন্য কোনো যোগ্য সচিব পাওয়া যাচ্ছে না। বস্তুত, অনেকেই এই বিভাগের সচিব পদে যেতে আগ্রহী। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এমনকি সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডও এই শূন্য পদে পদোন্নতির জন্য একাধিকবার সুপারিশ করেছিল। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে কনিষ্ঠ অথচ সর্বোচ্চ প্রভাবশালী উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া কাউকেই সচিব হিসেবে গ্রহণ করতে রাজি হননি। যে কারণে এই পদের বিপরীতে সুপারিশ করা সচিবকে অন্যত্র পদায়ন দিতে হয়েছে।
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া কেন এই পদে প্রস্তাবিত কাউকেই সচিব হিসেবে নিতে রাজি হলেন না, নেপথ্য কারণ উদঘাটন করতে গিয়ে জানা গেছে ভয়াবহতম তথ্য- যা হাসিনার ফ্যাসিস্ট পরবর্তী এই অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনকও বটে! আর জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক। গত মার্চে যখন এই সচিব পদটি খালি হয় ওই সময় এই পদের জন্য ডাক তোলা হয় ৫০ কোটি টাকা। কিন্তু পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়ের মতো দুর্বল বিভাগের সচিব পদে এত টাকা দিয়ে যেতে কেউ রাজি হননি। এর কারণ হলো, একেতো সরকারের বয়স কতদিন আছে তা তখনও অনিশ্চিতই ছিল। দ্বিতীয়ত, এই বিভাগের সচিব পদে থেকে উপরি পাওয়াটা দূরে থাকুক, পুঁজির ৫০ কোটি টাকা কালেকশন করাটাই কষ্টকর হবে। যেহেতু এই পদের জন্য এতো টাকা বিনিয়োগ করতে কেউ রাজি হননি, তাই পদটিও শূন্য থেকে যায়। তবে এতেও সজীব ভূঁইয়ার লস নেই। রুটিন দায়িত্বে কাউকে রাখলে তাকে দিয়ে যে কোনো কাজ করানো যায়। এটাই তাঁর লাভ।
তবে এদিকে ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগে আগ্রহী কাউকে যেহেতু পাওয়া যাচ্ছিল না তাই এর রেটও ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে। গত জুনের শেষ নাগাদ রেট কমে ২০ কোটিতে দাঁড়ায়। সাপ্তাহিক শীর্ষকাগজের এ প্রতিবেদকের ঘনিষ্ঠ একজন কর্মকর্তা জানান, তিনি বর্তমানে সচিবের সম পর্যায়ের সাধারণ একটি পদে আছেন। উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করেছিলেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব পদে পদায়নের জন্য। কিন্তু উপদেষ্টা এর বিনিময়ে তাঁর কাছে সরাসরি নগদ ২০ কোটি টাকা চেয়েছেন। উপদেষ্টার পিএস আবুল হাসানও এ সময় কক্ষে উপস্থিত ছিলেন। সচিব পদে পদায়ন পেতে আগ্রহী এই কর্মকর্তা বললেন, এতো টাকা আমি কোথায় পাবো? পাল্টা বক্তব্যে উপদেষ্টা বললেন, তাহলে সচিব হবেন কীভাবে? সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০ কোটি থেকে রেট এখন আরো কিছুটা কমে এসেছে। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের আয়ু নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়ায়, এ মুহূর্তে প্রার্থী পেতে সমস্যা হচ্ছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ এই সদস্য ইতিমধ্যেই অনেক কেলেঙ্কারির জন্ম দিয়েছেন। গত মার্চ মাসে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার পিতা বিল্লাল হোসেন কুমিল্লায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) থেকে একটি ঠিকাদারি লাইসেন্স নেন। আসিফ মাহমুদ শুরুতে এ বিষয়ে কোনো তথ্য জানেন না বলে সম্পূর্ণ অস্বীকার করে যান। তবে পরে তিনি এর সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, এটি তার জ্ঞাতসারে করা হয়নি। তিনি এও স্বীকার করেন যে, নিজে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বরত থাকা অবস্থায় বাবার ঠিকাদারি ব্যবসায় জড়ানো স্পষ্টভাবেই কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট (স্বার্থের সংঘাত)। পরবর্তীতে ২৪ এপ্রিল, ২০২৫ এলজিইডি কুমিল্লা জেলা কার্যালয় আনুষ্ঠানিকভাবে বিল্লাল হোসেনের ঠিকাদারির লাইসেন্সটি বাতিল করে। লাইসেন্স বাতিলের আদেশে নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুল মতিন স্বাক্ষর করেন এবং তিনি লাইসেন্স প্রদানের প্রক্রিয়াগত জটিলতার কথা উল্লেখ করেন।
গত জুন মাসে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপত্তা তল্লাশির সময় আসিফ মাহমুদের হাতের লাগেজে একটি আগ্নেয়াস্ত্রের ম্যাগাজিন পাওয়া যায়। তিনি মরক্কোর মারাকেশে অনুষ্ঠিতব্য “ওআইসি ইয়ুথ ক্যাপিটাল ইন্টারন্যাশনাল” কর্মসূচিতে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। এ নিয়ে যখন তোলপাড় শুরু হলো প্রথমে আসিফ মাহমুদ ঘটনাটিকে অস্বীকার করলেন। পরে আসিফ ফেসবুকে জানান, ভুলবশত ম্যাগাজিনটি তার ব্যাগে রয়ে গিয়েছিল। তিনি দাবি করেন, রাজনৈতিক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে তিনি একাধিক হামলার শিকার হয়েছেন, এটি তার নিরাপত্তার স্বার্থে লাইসেন্স করা বৈধ অস্ত্র। তিনি আরও জানান, সরকারি নিরাপত্তার ঘাটতি থাকায় আইনগতভাবে তিনি নিজের ও পরিবারের সুরক্ষার জন্য অস্ত্র বহন করেন। তবে এটি নিয়ে বিমানে উঠা বা বিমান বন্দরে ঢোকার অনুমতি আছে কিনা, এ প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি সজীব ভূঁইয়া। তাছাড়া ম্যাগাজিনটি একে- ৪৭ নয় বলেও তিনি দাবি করেন, যদিও গণমাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনার বিবরণে একে- ৪৭ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে এসব আলোচনাকেও ছাড়িয়ে গেছে উপদেষ্টা হিসেবে আসিফ মাহমুদের আর্থিক কেলেঙ্কারিসমুহ। গত মার্চে উপদেষ্টা আসিফকে নিয়ে ব্যাপকহারে কমিশন বাণিজ্য ও ঘুষ কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠলে এক পর্যায়ে এপিএস মোয়াজ্জেম হোসেনের ওপর পুরো দায় চাপিয়ে তাকে পদ থেকে অব্যাহতি দেন। বলা হয়, এপিএস মোয়াজ্জেম শুধু উপদেষ্টাকে ব্যবহার করেই এ অল্প সময়ে তিনশ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তাতে প্রশ্ন উঠে, ভাগবাটোয়ারায় এপিএস তিনশ’ কোটি টাকা পেলে উপদেষ্টা কত পেয়েছেন? এ প্রশ্নের জবাব তাৎক্ষণিকভাবে না পাওয়া গেলেও পরবর্তী বিভিন্ন ঘটনায় উপদেষ্টার লাগামহীন দুর্নীতির তথ্য বেরিয়ে আসে। স্থানীয়ভাবে কুমিল্লার মুরাদনগরে উপদেষ্টার পিতা বিল্লাল হোসেনের খুন-রাহাজানিসহ নানা অপকর্মের কাহিনী ইতিমধ্যে গণমাধ্যমে এসেছে। এর আগে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব পদে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে নিয়োগের সুপারিশ নিয়েও বড় ধরনের কেলেঙ্কারি ঘটে গেছে। শীর্ষ দুর্নীতিবাজ ও আওয়ামী দোসর বলে পরিচিত মো. নিজাম উদ্দিনকে একশ’ কোটি টাকা ঘুষ লেনদেনের বিনিময়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব পদে পদায়নের সুপারিশ করেন সজীব ভূঁইয়া, এ অভিযোগ উঠে। এ নিয়ে যখন তোলপাড় চলছিল সরকার বাধ্য হয় নিজাম উদ্দিনকে সরিয়ে দিতে।
উপদেষ্টার দপ্তরে ঘুষ ও কমিশনের দরকষাকষি এবং লেনদেনের সুবিধার জন্য একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এই সিন্ডিকেটে রয়েছেন উপদেষ্টার পিএস আবুল হাসান, মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আকবর হোসেন এবং যুগ্মসচিব ড. মো. মনিরুল ইসলাম। এপিএস পদে মোয়াজ্জেম হোসেন থাকাকালে তিনিই এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দিতেন। তাকে অব্যাহতির পর এরাই সবকিছু দেখছেন উপদেষ্টার পক্ষ থেকে। অন্তর্বর্তী সরকারের আয়ু শেষ হয়ে যাওয়ার আশংকায় সিন্ডিকেটটির দৌরাত্ম এখন আগের তূলনায় বেড়েছে, বলছেন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা।
নিউজটি আপডেট করেছেন : News Upload
কমেন্ট বক্স